রমজানের আগে যেসব প্রস্তুতি নিতেন নবিজি (সা.)
রমজান মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্যে বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাসটিকে দিয়েছেন বিশেষ মর্যাদা। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। তাই রমজান শুরুর আগেই রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন।
রমজান প্রাপ্তির দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব মাসের চাঁদ দেখে রমজান প্রাপ্তির আশায় বিভোর থাকতেন। মাহে রমজানের তাওফিক ও বরকত লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহর দরবারে এই দোয়া করতেন,
‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্যে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (তাবারানি: ৩৯৩৯; বাইহাকি: ৩৫৩৪)
ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, ‘মুয়াল্লা ইবনে ফজল বলেছেন, তারা ছয় মাস রমজান পাওয়ার জন্য দোয়া করতেন এবং ছয় মাস আমলগুলো কবুল হওয়ার জন্য দোয়া করতেন।’
দিনক্ষণ গণনা ও শাবান মাসের গুরুত্বারোপ
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) শাবান মাসের (দিন-তারিখের হিসাবের) প্রতি এত অধিক খেয়াল রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (আবু দাউদ: ২৩২৫)
এমনকি তিনি শাবানের হিসাব রাখতে নির্দেশও দিয়েছেন, যেন রমজান আগমনের বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি না হয়। তিনি বলেন, তোমরা রমজানের জন্যে শাবানের চাঁদের হিসাব রাখ। (সিলসিলাতুস সহিহাহ, আলবানি, ২/১০৩)
রমজানের আগের মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখা
শাবান মাসে রাসুলুল্লাহ (স.) অধিক হারে রোজা রাখতেন। তিনি উম্মতকেও এর ওপর উৎসাহিত করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (স.)-কে কখনও রমজান ছাড়া অন্য মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি। শাবান মাসে তিনি অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন। বছরের অন্য কোনো মাসে এরূপ করতেন না।’ (বুখারি: ১৬৮৬)। উসামা ইবনে জায়দ (রা.) নবীজী (সা.)-কে শাবান মাসে অধিক রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,
‘বেশির ভাগ মানুষ এ মাসের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। অথচ এটি এমন মাস, যে মাসে আল্লাহর কাছে বান্দাদের আমলনামা পেশ করা হয়। আমি চাই আমার আমলনামা এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার’। (নাসায়ি: ২৩৫৭)
রমজানের নিকটবর্তী দিনগুলোতে রোজা না-রাখা
শাবান মাসে অধিক হারে রোজা পালন করা সুন্নতি আমল হলেও রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরো শাবান মাসব্যাপী রোজা পালন করতেন না। আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, শাবানের তুলনায় অন্য কোনো মাসে আমি তাকে এত অধিক হারে রোজা পালন করতে দেখিনি। তিনি শাবানের প্রায় পুরোটাই রোজায় অতিবাহিত করতেন, তবে কিছু দিন বাদ রাখতেন। (মুসলিম: ১১৫৬)
সাধারণ মানুষকে রমজানের প্রতি উৎসাহী করা
রসুলুল্লাহ (স.) সাহাবিদের রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করাতেন এবং তাদের ইবাদতে উৎসাহ দিতেন। তিনি বলতেন, রমজান বরকতময় মাস, তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (নাসায়ি ২১০৬)
রসুলুল্লাহ (স.) বলতেন, ‘রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের কপাটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়; তার একটি দরজাও খোলা হয় না। উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো, বন্ধ করা হয় না তার একটিও। একজন আহ্বানকারী আহ্বান জানিয়ে বলেন, হে কল্যাণের প্রত্যাশী, অগ্রসর হও। আর যে অকল্যাণের প্রত্যাশী, বিরত হও। আল্লাহ জাহান্নাম হতে অনেককে মুক্তি দিবেন এবং তা প্রতি রাতেই।’ (তিরমিজি: ৬৮৩)
রোজাদারদের জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন রসুলুল্লাহ (সা.)। সাহাবিদের তিনি বলতেন, ‘জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে রইয়ান নামে। বলা হবে, রোজাদারগণ কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবেন, তারা ছাড়া এ দরজা দিয়ে অপর কেউ প্রবেশ করবেন না। তারা প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। অপর কেউ তাতে প্রবেশের সুযোগ পাবেন না।’ (বুখারি: ১৭৯৭)
রমজানের আগমন সংবাদে আনন্দ প্রকাশ করা
আল্লাহর রাসুল (স.) নিজে রমজানের আগমনে অতিশয় আনন্দিত হতেন। তাই প্রত্যেক মুমিন বান্দাই রমজানের আগমনে আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন।
রাসুল (স.) সাহাবিদের বলতেন, ‘তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।’ (নাসায়ি: ২১০৬)
No comments