অগোছাল বইমেলা প্রবেশে নেই কোনো নিরাপত্তা তল্লাশি
দ্বিতীয় দিনে এসেও গুছিয়ে উঠতে পারেনি বইমেলা। এখনো এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। এতে বইমেলায় আগত পাঠকরা তাদের বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। পাঠক, প্রকাশক অনেকেই এবার গোছাল বইমেলার আশা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সে আশায় শুধুই গুড়ে বালি। তারপরও প্রথম দিন বইয়ের টানে অনেক পাঠক বইমেলায় ছুটে এসেছেন। কেউ কেউ নতুন বইও সংগ্রহ করেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটি প্রথম বইমেলা। নতুন বইয়ে এবার নানাভাবে উঠে আসছে গত সরকারের নানা দিক এবং জুলাই অভ্যুত্থান।
তবে মেলায় আগতদের অনেকেই একটি বিষয়ে কতৃপক্ষের জরুরি দৃষ্টি দেওয়ার জোর দাবি তুলেছেন। বিশেষ করে প্রকাশকরা জানিয়েছেন, মেলায় প্রবেশের সময় যে নিরাপত্তা তল্লাশি করা হতো, সেটা এবার নেই বললেই চলে।
রোববার সন্ধ্যায় দেখা গেছে, আর্চওয়ে এবং পুলিশ সদস্য থাকলেও কেনোরকম নিরাপত্তা তল্লাশি ছাড়াই সবাই বইমেলায় নির্বিঘ্নে প্রবেশ করেছেন। প্রকাশকরা বলছেন, এতটা ঢিলেঢালাভাব অতীতে তারা দেখেননি।
এদিন মেলার বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ প্রকাশক প্যাভিলিয়ন এবং স্টল নির্মাণ কাজ শেষ করলেও অনেকে এখনো কাজ শেষ করতে পারেননি। বইমেলাজুড়েই এখনো হাতুড়ি-পেরেকের আওয়াজ, রং দেওয়া সবই চলছে। মেলার অনেক অংশে এখনো ইট বিছানো হয়নি। সবাই বলছেন, মেলা গুছিয়ে উঠতে আরও সময় লাগবে।
প্রথমার প্যাভিলিয়নে যেতেই চোখে পড়বে কয়েকটি বই। তার মধ্যে সিরাজুল ইসলাম চেৌধুরীর লেখা ‘ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান ও জনমুক্তির প্রশ্ন', আসিফ নজরুলের ‘শেখ হাসিনার পতনকাল', আলী রিয়াজের ‘আমিই রাষ্ট্র : বাংলাদেশের ব্যক্তিতানি্ত্রক স্বৈরতন্ত্র'। প্রথমার ম্যানেজার জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা একই সঙ্গে আশাবাদী এবং আশাহত। আশাবাদী এজন্য যে, প্রথম দিনই অনেক পাঠককে দেখতে পাচ্ছি। আর আশাহত এজন্য যে, আশা করেছিলাম এবার একটা গোছানো মেলা পাব। কিন্তু সেটা হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে কবি আবিদ আজম অন্যপ্রকাশের এবারের প্যাভিলিয়নের একটি ছবি পোস্ট করে এটি দিয়ে অন্যপ্রকাশ কী বোঝাতে চাচ্ছে জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে অন্যপ্রকশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ মানে অন্যায়ের প্রতিবাদ। সেই একুশ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ভাষার অধিকারের দাবিতে। তাই একুশ মানে শোক আর শক্তি। সেই শোক ও শক্তি ভাষা পেয়েছে ‘অন্যপ্রকাশ'-এর এবারের প্যাভিলিয়ন সজ্জায়। কালো শোক থেকে রক্তলাল শক্তির উত্থান। কাঁটাতারের ব্যারিকেড ভেঙে বর্ণমালারা মুক্তি পেয়েছে।
তিনি বলেন, একুশের প্রতিবাদের পথ ধরে এসেছে একাত্তর। এসেছে চব্বিশ। রক্তস্নাত সেই পথ। কোনোবারই পরাভব মানিনি আমরা। শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে গেছে এই জাতি। প্রতীকীরূপে আমাদের সেই গেৌরবগাথা মূর্ত হয়েছে ‘অন্যপ্রকাশ'-এর প্যাভিলিয়ন সজ্জায়। আদর্শ পাবলিকেশনের এবারের একটি উলে্লখযোগ্য বই আহম্মদ ফয়েজের ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভু্যত্থান'। বইটি এখন বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে।
ধানমন্ডি থেকে বইমেলায় আসা রাজিব হাসান বলেন, নতুন বইয়ের টানেই বইমেলায় ছুটে এসেছি। সময় পেলেই আসব। দেখে দেখে নতুন লেখকদের বই সংগ্রহ করতে ভালোবাসি। তাই দ্বিতীয় দিন অনেকটা কেৌতূহল থেকেই ছুটে আসা। তবে বইমেলাজুড়েই যেভাবে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে আছে তাতে মনটা খারাপই লাগে। সারা বছরের প্রস্তুতি শেষে প্রতিবারই সেই একই দৃশ্য দেখতে হয়।
রোববার বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘হেলাল হাফিজের রাজনৈতিক পাঠ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. কুদরত-ই-হুদা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মৃদুল মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন সুমন রহমান। প্রাবন্ধিক বলেন, ঊনসত্তরের গর্ভ থেকে যেসব কবির জন্ম হয়েছিল, কবি হেলাল হাফিজ তাদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতার উচ্চারণ ছিল রাখঢাকহীন, স্পষ্ট, অনাবিল ও অভাবিত। কবিতা তার কাছে কেবল ব্যক্তিগত দীর্ঘশ্বাসের বিষয় ছিল না। তিনি মনে করতেন, সমষ্টির জন্যও কবিতার একটা দায় আছে।
আলোচক বলেন, কবি হেলাল হাফিজের কবিতার কথা বললেই পাঠকের মানসপটে ভেসে ওঠে ‘এখন যেৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়' পংতিটি। বাংলা ভাষার যেসব কবি কবিতা, নিজস্ব জীবনদর্শন ও জীবনযাপন দিয়ে মিথ হয়ে উঠতে পেরেছেন, কবি হেলাল হাফিজ তাদের একজন। কবিতার ভেতর প্রেম, বিদ্রোহ ও রাজনৈতিক চেতনা কবিকে মানুষের অনুভূতির কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।
লেখক বলছি মঞ্চে রোববার নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি রাসেল রায়হান, কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন শফিক এবং শিশুসাহিত্যিক আশিক মুস্তাফা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি হাসান হাফিজ এবং জাকির আবু জাফর। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অনন্যা লাবণী এবং শিপন হোসেন মানব। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রিজিয়া পারভীন, প্রিয়াংকা গোপ, ইসরাত জাহান, মিজান মাহমুদ রাজীব, মো. মাইদুল হক এবং নাফিজা ইবনাত কবির।
No comments