Adsterra

সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তি সম্ভবত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন: তারেক রহমান

সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তি সম্ভবত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন: তারেক রহমান, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তি কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা সম্ভবত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন। বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন স্টেটমেন্ট থেকে কনফিউশন তৈরি হচ্ছে, মানুষ কনফিউজড হচ্ছে।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বার আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত ৩১ দফা প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সবক্ষেত্রে একটা ভঙ্গুর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, বিগত ১৫-১৬ বছরে প্রত্যেকটি সেক্টরে কী অরাজকতা হয়েছে, কী অন্যায় হয়েছে, তা আপনাদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। আপনারা বিভিন্ন নির্যাতন-অত্যাচারের কাহিনি শুনেছেন। বর্তমানে আলোচিত শব্দ ‘বৈষম্যের’ শিকার হয়েছেন। বিএনপিসহ যেসব দল মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিল, তাদের নেতাকর্মীদের কী অবস্থা হয়েছে, আপনারা চাক্ষুষ দেখেছেন।

আমরা প্রায় আড়াই বছর আগে ৩১ দফা ঘোষণা করেছি দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের অতীতের রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। আমরা দেখেছি স্বৈরাচারের সময় অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, প্রশাসনসহ সব সেক্টর ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা যদি এখন কতগুলো পলিসি বা সিদ্ধান্ত না গ্রহণ করি, তাহলে দেশকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।

তারেক রহমান আরও বলেন, যেসময় কেউ সাহস করেনি সংস্কারের কথা তুলতে, স্বৈরাচারের চোখে চোখ রেখে বলতে যে এই এই বিষয়ে সংস্কার করা দরকার, তখন বিএনপি ও রাজপথের আন্দোলনের কিছু দল মিলিতভাবে আমরা ৩১ দফা দিয়েছিলাম। আজকের অনেক ব্যক্তি সেসময় সংস্কারের ‘স’ এর ধারে কাছে ছিলেন না। কিন্তু বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সেদিন ৩১ দফা উপস্থাপন করেছিল।

সংসদের মধ্যে দিয়ে সংস্কার করতে হবে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের লক্ষ্য আছে যে কীভাবে আমরা দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই। ৩১ দফায় আমরা বলেছি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে পুনরায় প্রবর্তনের কথা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার কথা বলেছি। আরেকটি বিষয় আছে নৈতিক পরিবর্তন, রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন। এই বিষয়গুলোকে অ্যাড্রেস করতে হলে, সংসদের মধ্যে দিয়ে করতে হবে। সংসদ ছাড়া কীভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করা যায়, তা একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার বোধগম্য নয়।

এক এগারোর সরকারের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, যারা সংস্কারের কথা বলছেন, আমার ধারণা তারাও এটা বুঝতে সক্ষম যে, যাই করি না কেন, এটা এক এগারোর সরকারেও দেখেছি- তারাও অনেক বড় বড় কথা বলেছিল। কিন্তু পরে যখন পার্লামেন্ট বসেছিল, স্বৈরাচার যখন ক্ষমতা নেয়- যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঘাপলা ছিল, ক্ষমতায় যাওয়া স্বৈরাচারের বিভিন্ন কথাবার্তা থেকে সেটা বেরিয়ে এসেছে- এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত এবং নির্বাচনের ফলাফলের বিভিন্ন অ্যানালাইসিসেও দেখা গেছে। তারপরও গণতন্ত্রের স্বার্থে সেটা আমরা মেনে নিয়েছিলাম। তখন কিন্তু সংস্কার প্রস্তাবকে অন্যভাবে পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছিল। কারণ সেটি প্রকৃত জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ছিল না।

জনগণের রায়ের মাধ্যমে যে সংসদ আসবে, সেই সংসদ একমাত্র সংস্কার প্রস্তাবকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হবে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এবার আর সেবারের তফাৎ এটাই যে, এবার সংস্কারের প্রস্তাব প্রথম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছে। যেহেতু প্রথম প্রস্তাব আমরা যেহেতু, সেহেতু এটা বাস্তবায়ন করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। আর যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তবে অবশ্যই সংসদের প্রয়োজন।

সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন স্টেটমেন্ট থেকে কনফিউশন তৈরি হচ্ছে, মানুষ কনফিউজড হচ্ছে অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, কোন নির্বাচন আগে হবে, কোন নির্বাচন পরে হবে- এমন দাবি থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে। আমরা বাইরে তাকালে বিভিন্ন অস্থিরতা দেখতে পাই। অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে, দেশের মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিতে চায়, সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করা এবং দেশের মানুষকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করা। আমরা লক্ষ্য করছি, সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির কথাবার্তা দেখে মনে হচ্ছে তারা সম্ভবত তাদের লক্ষ্য থেকে কিছুটা বিচ্যুত হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে যখন কনফিউশন থাকবে, তখন অস্থিরতা তৈরি হবে। অস্থিরতা যদি থাকে, আমরা যে যতই সংস্কারের কথা বলি না কেন, কোনোটাই সফল হবে না। রাজনীতি অস্থির হলে, এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে, আর অর্থনীতির প্রভাব পড়বে সবকিছুতে। তার অন্তর্বর্তী সরকারসহ সব মানুষের এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশকে যত দ্রুত সম্ভব একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসা।

সারা পৃথিবীতে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক সংসদে নিয়ে আসা হয় মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সংসদ সবচেয়ে বড় জায়গা যেখানে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়। আমরা সংসদকে কার্যকর করতে যত দেরি করব, এই অস্থিরতা, তর্ক-বিতর্ক তত বাইরে ছড়াতে থাকবে। আর যত ছড়াতে শুরু করবে, সবক্ষেত্রে অস্থিরতা তত বাড়তে থাকবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

দেশে যত দ্রুত সম্ভব একটি স্থিতিশীল অবস্থা আনা যাবে, তত দ্রুত দেশকে ধ্বংসের কিনারা থেকে বের করে নিয়ে আসা সম্ভব হবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, তালি পাওয়া কথা বলা সহজ। কিন্তু বাস্তবতা অনেক ভিন্ন এবং রূঢ়। বাস্তবতায় আমাদের অনেক বিষয় বুঝে মেনে চলতে হয়। আমি বলতে চাই, যত বেশি কোনটি আগে করব নিয়ে তর্ক চলতে থাকে, তাহলে জাতি সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আরও বেশি এবং বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে।

অনেকে বলে থাকেন যে, নির্বাচন হলেই কি সব সমস্যা সমাধান হবে মন্তব্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, করে আমরা মনে করি, নির্বাচন হলে যে একটা স্থিতি অবস্থা আসবে এবং ধীরে ধীরে রিফর্মের কাজ শুরু হবে, তাতে সমস্যার তীব্রতা ধীরে ধীরে কমা শুরু করবে। নির্বাচন হলে সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন মানুষ দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন, তারা আলোচনা করবেন, কাজ করবেন। একদিনে কিছুই পরিবর্তন হবে না, কিন্তু সম্ভাবনা শুরু হবে।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত

বিএনপির ৩১ দফা শুরু আমাদের নয়, বাংলাদেশের জনগণের একটি বৃহৎ অংশের মতামতের প্রতিফলন দাবি করে তারেক রহমান বলেন, আমাদের ৩১ দফার উদ্দেশ্যই ছিল কীভাবে দেশ ও দেশের মানুষের অবস্থার উন্নতি ঘটানো যায়। এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের সুযোগ যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল পায়, তাহলে এই ৩১ দফা বাস্তবায়নে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি, অন্তর্বর্তী সরকারের ৬টি কমিশন বিভিন্ন সুপারিশ দিয়েছেন। মিলিয়ে দেখলে দুটোর মধ্যে খুব একটা তফাৎ দেখা যায় না। কিছু পার্থক্য থাকলেও, মূল বিষয়গুলোর মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। 

No comments

Powered by Blogger.