ধামরাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠকসহ বহু নেতাকর্মীর পদত্যাগ
ঢাকার ধামরাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে মুখ্য সংগঠক রহিত খন্দকার ও যুগ্ম সদস্য সচিব জুবায়েদ আলম পিয়াসসহ অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করে কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধামরাই উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক বিক্ষোভ মিছিলের পর সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন তারা। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শতাধিক নেতাকর্মী যোগ দেন।
বক্তারা বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ধামরাই উপজেলা কমিটি গঠন করে। সেই কমিটিতে উজ্জ্বল হোসেন নামে যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে, তিনি নিজে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। উজ্জ্বল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিয়েছেন। উজ্জ্বলের নিজের ওয়ার্ডের লোকদের কমিটিতে বেশি বেশি পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিতর্কিতদের কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। কমিটি গঠনের আগেই আমরা বিষয়টি নিয়ে তাদের বারবার অবহিত করেছি। এখানে কমিটি করার দায়িত্বে থাকা মেহরাব সিফাত অবৈধভাবে এই কমিটি করেছেন, সব জেনেশুনে। তারা এই ব্যানারকে কলঙ্কিত করেছেন। আমরা অবিলম্বে কমিটি বাতিল ও পুনর্গঠনের দাবি জানাই। নাহয় কঠোর প্রতিবাদ গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া কমিটি অবাঞ্ছিত বলেও ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধরা।
নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব জুবায়েদ আলম পিয়াস বলেন, ধামরাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে কমিটি দেওয়া হয়েছে। এটি একপাক্ষিক অবাঞ্ছিত কমিটি। আওয়ামী পন্থী লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। আহ্বায়ক উজ্জ্বল আওয়ামী পরিবারের ও বিতর্কিত। এছাড়া কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই আওয়ামীপন্থী ও উজ্জ্বলপন্থী। কমিটি ভর্তি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ধামরাইয়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ছিল, তারাই আন্দোলন শুরু করে। আমরা তাদের বাদ দিয়ে কিছু করতে পারি না। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্মারকলিপি দেব। আমরা জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেয়নি কেন, তার জবাবদিহিতা করতে হবে। মেহরাব সিফাতকে এখানকার অনেকে প্রমাণসহ কথা বলেছি। আমরা বলেছি, বিতর্কিত কাউকে এই দায়িত্বে না দিতে। তাহলে এই ব্যানার কলঙ্কিত হবে।
নুসরাত জাহান আনিকা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে কমিটিটা হয়েছে, সেটি আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত মনে হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের লোকজন রয়েছে। ধামরাইয়ে যখন আমরা আন্দোলন শুরু করি, কোনো সমন্বয়ক ছিল না, কোনো সহযোগিতা ছিল না। প্রচুর হুমকি পেয়েছি। আমরা কষ্ট করেছি, আমাদের ভাইয়ের রক্তের ওপর দিয়ে যখন আওয়ামী লীগের কেউ আহ্বায়ক হবে, আমরা কি সেটা সহ্য করবো? আওয়ামী লীগ কেন এখানে থাকবে? তাদের কেন মেনে নেবো? সহ্য করার মতো নয়, আমরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত বলছি। আমাদের দাবি, এ সংগঠন পুনর্গঠন করা হোক। যারা আন্দোলনের সামনে ছিল তাদের দায়িত্ব দেওয়া হোক।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধামরাই উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক উজ্জ্বল হোসেন। তিনি বলেন, ওরা যে অভিযোগ জানিয়েছে, এসব অভিযোগ আরও ১০ দিন আগে থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়ে এসেছে। কিন্তু কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। আর যেসব অভিযোগ দিয়েছে, সেগুলোর জবাবের প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আমরাও সবাইকে জানাবো। ওরা যে অভিযোগ তুলেছে তার কোনো প্রমাণ নেই। ওদের নেপথ্যে কি, সেগুলোর প্রমাণও আমরা দিব।
অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মেহরাব সিফাত বলেন, পুরো প্রক্রিয়া একটা রাজনৈতিক গোষ্ঠী, যারা আন্দোলন করেছে, কিন্তু আন্দোলনের পরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। সেটিরই একটা ঘটনা এটা। যার নামে অভিযোগ, সেই অভিযোগের আসল তথ্যসহ প্রমাণ করতে পারবে না। আমাকে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছিল, আমি সেগুলোর মেটা ডাটা পরীক্ষা করাই, সেগুলো মিথ্যা প্রমাণ হয়।
দ্বিতীয়ত, উনাদের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব আছে। যে জন্য আমার সম্মুখীন না হয়ে তারা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। কারণ যখন কমিটি করার জন্য ঘোষণা দিয়ে মাঠপর্যায়ে যাই, পাবলিক পেজ থেকে ঘোষণা দেই, তখন তারা সম্মুখীন হয় না, বক্তব্য দেয় না। কিন্তু কমিটি দেওয়ার আগমুহূর্তে তারা কমিটি দিতে নিষেধ করে ও কমিটি আটকানোর চেষ্টা করে এবং রাজনৈতিক দলের যারা তারা নিজেদের আন্দোলনের পরিচয় রেখে, রাজনৈতিক পরিচয়ে থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদগুলো গ্রাস করতে চায়। আমাদের যেহেতু অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম করার কথা ছিল, তাই তারা এখান থেকে বাদ পড়ে। সেই প্রতিহিংসা থেকে তারা প্রেস ব্রিফিং করে। প্রতিবাদ হলেও এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
এর আগে, কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরপরই এ নিয়ে প্রতিবাদ জানান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা, দেন পদত্যাগের ঘোষণা। ফেসবুকে এ কমিটি নিয়ে নিন্দা জানান তারা।
No comments