গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক যুগ পর সমাবর্তন, তেমন উচ্ছ্বাস নেই শিক্ষার্থীদের
দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর পর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) আয়োজিত হতে যাচ্ছে সমাবর্তন। বিগত এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে পাস করে বের হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন সমাবর্তন না হওয়ায় এর জন্য মুখিয়ে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তন হতে যাচ্ছে এমন খবরে উদ্দীপনা ছড়ালেও ধীরে ধীরে মিইয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা। কারণ, সমাবর্তনে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ২ হাজার ৩৮৮ শিক্ষার্থী, যা যোগ্য শিক্ষার্থীর মাত্র ৩৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩৬ দিন আগে ঘোষণা দিয়েছে যে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু এই ঘোষণার বাইরে সমাবর্তনে উপস্থিতির নিয়মকানুনসহ অন্যান্য এজেন্ডা প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বাড়তি খরচ, অতিথি নিয়ে আসতে বিধিনিষেধসহ নানা জটিলতায় শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারিয়েছেন বলে দাবি অনেকের।
এ ছাড়া সমাবর্তন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখে এই আয়োজন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে কি না, এ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাই পর পর পাঁচ দফা নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির পরও প্রায় ৬৫ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেনি।
সমাবর্তন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সমাবর্তন আয়োজনের বিভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। নিরাপত্তা নির্দেশনা নিয়ে ব্যঙ্গ করে শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান বুলবুল লিখেছেন, রেজিস্ট্রেশনের আগে কোনো নিয়ম দেওয়া হয়নি। রেজিস্ট্রেশনের পর এসব নিয়ম মানি না।
অন্যদিকে, অনেক শিক্ষার্থী প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থী মো. রায়হানুল কবির রকি মন্তব্য করেছেন, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন অযোগ্য, তার প্রমাণ এসব নিয়মাবলি।
বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্নভাবে সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছে সমাবর্তনের বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। একাধিকবার জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, টেলিভিশন চ্যানেলেও সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। দীর্ঘ বিরতির কারণে অনেকেই নিবন্ধন করেননি, পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও একটি কারণ। তবে সমাবর্তন সফল করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দূরত্বই মূলত এই সংকট সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। ফিজিওথেরাপির সাবেক শিক্ষার্থী ইমন চৌধুরী বলেন, প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার যোগাযোগের ঘাটতি প্রকট। অনেক শিক্ষার্থী বিভ্রান্ত হয়েছে সময় পরিবর্তনের কারণে। দীর্ঘ সময় পর সমাবর্তন আয়োজন হলেও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে এটি ব্যাহত হয়েছে।
শুধু প্রশাসনিক দূরত্ব নয়, আস্থার সংকটও নিবন্ধন কম হওয়ার কারণ বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনসারী রোমিও সমাবর্তন বর্জনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম সামনে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, তাদের হাতেই সমাবর্তনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই অযোগ্য প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা থেকেই অনেকেই নিবন্ধন করেননি।
ছাত্র সংসদের সাবেক নেতারাও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (গকসু) সাবেক ভিপি জুয়েল রানা বলেন, প্রশাসন বারবারই সমাবর্তনকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে দেখে আসছে। শিক্ষার্থীদের অনাস্থা ও অসন্তোষের কারণেই অনেকে নিবন্ধন থেকে বিরত থেকেছেন। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উচিত এই প্রহসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ মানতে নারাজ এবং সমাবর্তন সফল করার প্রচেষ্টার কথা বলছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্নভাবে সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছে সমাবর্তনের বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। একাধিকবার জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, টেলিভিশন চ্যানেলেও সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। দীর্ঘ বিরতির কারণে অনেকেই নিবন্ধন করেননি, পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও একটি কারণ। তবে সমাবর্তন সফল করতে প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ সমাবর্তন আয়োজিত হয়েছিল। এরপর উপাচার্য না থাকাসহ বেশ কিছু কারণে দীর্ঘদিন সমাবর্তন আয়োজন করতে পারেনি গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ২০২৪ সালেই সমাবর্তন আয়োজনের জন্য কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর আবারও ভাঁটা পড়ে আয়োজনে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন।
No comments