Adsterra

বালোচ লিবারেশন আর্মি কেন পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে ?

বালোচ লিবারেশন আর্মি কেন পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছেঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

বেলুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলায় নিহতের সংখ্যা সরকারিভাবে এখনও প্রকাশ না করা হলেও পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী অভিযানের সময় ৩৩ জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি জানিয়েছে। কোয়েটা যাওয়ার পথে বোলান উপত্যকার কাছে চারশোরও বেশি যাত্রীবাহী ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বালোচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) এটিই সব চাইতে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।

ওই গোষ্ঠীর দাবি, তাদের তরফে ওই ট্রেনের যাত্রী বেসামরিক নাগরিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। জিম্মি ছিলেন পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। কর্মকর্তাদের পরিবর্তে বেলুচিস্তানের যে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দি রয়েছে, তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছিল বিএলএ। ট্রেনে যাত্রীদের জিম্মির ঘটনার দুই দিন পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করার দাবি জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত পাকিস্তানে এর আগেও হামলা চালিয়েছে বালোচ লিবারেশন আর্মি। জাফর এক্সপ্রেসের উপর তাদের এই হামলা দুইদিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরের শিরোনামে ছিল। এখন প্রশ্ন হলো বালোচ লিবারেশন আর্মি কারা এবং কেনই বা তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয়?

বালোচ লিবারেশন আর্মি ১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিক থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে ধারণা করা হয়। সেই সময় পাকিস্তানে জুলফিকার আলি ভুট্টোর সরকার ক্ষমতায় ছিল। এরপর যখন সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া-উল-হক ওই দেশে ক্ষমতায় আসেন, তখন বেলুচিস্তানের জাতীয়তাবাদী নেতাদের সঙ্গে তার আলোচনা শুরু হয় এবং সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসানের পর বিএলএর সদস্যরা মূলত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। কিন্তু ২০০০ সালে তারা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সময় পারভেজ মুশাররফ পাকিস্তানে ক্ষমতায় ছিলেন।

এই বছর বেলুচিস্তান হাইকোর্টের বিচারক নওয়াজ মাররিকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় খায়ের বকশ মাররি নামে এক রাজনীতিবিদ এবং তার ছেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এই সময় থেকেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং সরকারি সংস্থার উপর আক্রমণের ঘটনা বাড়তে থাকে। এই জাতীয় অনেকলো ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল বালোচ লিবারেশন আর্মি।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

বিএলএ-র নেতা

পাকিস্তানে ২০০৬ সালে বালোচ লিবারেশন আর্মিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সময় খায়ের বখশ মাররির ছেলে বালাচ মাররিকে এই গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এরপর হঠাৎ ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে বালাচ মাররির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। পরে, বিএলএর পক্ষ থেকে খবরটি নিশ্চিত করে জানানো হয় যে ডুরান্ড লাইনের কাছে সংঘর্ষের সময় তাদের এই নেতার মৃত্যু হয়েছে।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সেই সময় থেকে দাবি জানিয়ে আসছে যে, বালাচ মাররির ভাই হারবিয়ার মাররিই এখন তার উত্তরসূরি। ব্রিটেনে বসবাস করেন হারবিয়ার মাররি। তবে তিনি পাকিস্তানের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। তিনি জোরালোভাবে দাবি করেছেন যে, পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী তিনি কোনওরকম সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নন। এদিকে আসলাম বালোচের নামও বিএলএএর প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছিল।

কিন্তু কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি আহত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য ভারতে চলে আসেন। সেই সময় বালোচ লিবারেশন আর্মির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। আবার কয়েকটি রিপোর্ট বলছে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবার সক্রিয় হন। ডুরান্ড লাইনের আশেপাশের অঞ্চলে তিনি সক্রিয় ছিলেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।


বিভিন্ন সময় বিএলএর আক্রমণ

মাজিদ ব্রিগেডের নাম সেই বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার স্মরণে রাখা হয় যিনি ১৯৭০-এর দশকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর উপর গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিলেন। বালোচ লিবারেশন আর্মি ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বালোচ রাজি অজয় সাঙ্গারের (বিআরএএস) নামক বিচ্ছিন্নতাবাদী জোটে যোগ দিয়েছিল। এই জোটে বালোচ লিবারেশন ফ্রন্ট এবং বেলুচিস্তান রিপাবলিকান গার্ডও সামিল রয়েছে যারা সশস্ত্র অভিযান চালায়। এই জোট পাকিস্তানে বহু হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকেও বহুবার নিশানা করেছে বিআরএএস।

এই জোট প্রথমবার আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করে ২০১৮ সালে। ওই বছর অগস্ট মাসে পাকিস্তানের চাঘি জেলায় সংগঠিত আত্মঘাতী হামলা চালায় তারা। এই হামলাকে বাস্তবায়িত করেছিলেন আসলাম বালোচের ছেলে। এ ঘটনায় একটি যাত্রীবাহী বাসকে নিশানা করা হয়েছিল। ওই বাসের যাত্রী ছিলেন চীনের কর্মী এবং প্রকৌশলীরা। ওই বছরই আরও একটি অভিযান চালানো হয় এই জোটের পক্ষ থেকে। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত চীনা কনস্যুলেটে চালানো হামলার দায় স্বীকার করে বিআরএএস।

পরের বছর অর্থাৎ, ২০১৯ সালে বেলুচিস্তানের গোয়াদারের পার্ল কন্টিনেন্টাল হোটেলে হামলার দায়ও স্বীকার করেছিল এই জোট। এরপর ২০২২ সালে শারি বালোচ নামে এই গোষ্ঠীর এক নারী সদস্য করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চীনা অধ্যাপকের ওপর হামলা চালান। পরের বছর, (২০২৩ সালে) সামিয়া কালান্দারানি নামে ওই গোষ্ঠীর আরেক নারী সদস্য তুরবত এলাকায় পাকিস্তান ফ্রন্টিয়ার কর্পসের (এফসি) একটি গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালান। ২০২৪ সালে বেলার একটি এফসি সেন্টারে আত্মঘাতী হামলা চালান মাহুল বালোচ নামে আর একজন নারী।

এইবার চলতি বছরে বেলুচিস্তানের বোলান প্রদেশে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনের উপর হামলা এবং ওই ট্রেনটিকে হাইজ্যাক করার দায়ও স্বীকার করেছে বিএলএ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে বিএলএ যে কয়টি হামলা চালিয়েছে তার মধ্যে এটিকে অন্যতম বড় হামলা বলে মনে করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.