করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ করার দাবি ঢাকা চেম্বারের
বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়ে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা, যা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সংস্থাটি আরও দেড় লাখ টাকা বাড়িয়ে পাঁচ লাখে উন্নীতর কথা বলেছে সিপিডি।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সভাপতির সভাপতিত্বে এনবিআর ভবনে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব তুলে ধরেন ডিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট তাসকীন আহমেদ। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাবনা দিয়েছেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, উন্নত দেশে ব্যক্তি শ্রেণির কর ৫০-৫৫ শতাংশ। এটাকে কমানো ঠিক হবে না, বাড়াতে হবে। না হলে বৈষম্য কমবে না। উন্নত দেশে ব্যক্তির কর বেশি হওয়ায় বৈষম্য কম। এটা ঠিক তারা বেশি কর দিয়ে বেশি সেবা পান।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বাজেট প্রস্তাবনায় বলেন, করমুক্ত আয় পাঁচ লাখ টাকার পরবর্তী স্লাব ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ৫ শতাংশ করহার করা দরকার। যেটা এখন এক লাখ টাকায় সীমাবদ্ধ করেছেন।
অনানুষ্ঠানিক খাত ব্যতীত একক মূসক হার এর প্রস্তাবনা রেখে বলেন, বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড মূসক (ভ্যাট) হার ১৫ শতাংশ, তবে বিভিন্ন খাতে তা কমিয়ে ১০ শতাংশ, ৭.৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এভাবে বিভক্ত হার থাকার ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য জটিলতা সৃষ্টি হয়, কর প্রশাসনের দক্ষতা ব্যাহত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে বিরোধ দেখা দেয়। এর পরও উপকরণ রেয়াতের সুবিধা সবক্ষেত্রে নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী বাড়তি করের বোঝা বহন করতে বাধ্য হন বলে মনে করেন তিনি।
তাসকীন আহমেদের দাবি, একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ মূসক হার এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের জন্যে এক শতাংশ নির্ধারণ করলে বর্তমান জটিলতা ও বিভ্রান্তি দূর হবে। এ হারে আসলে কর আহরণ সহজ এবং রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ফাহমিদা খাতুন বলেন, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি। এ ছাড়া, শহরের চেয়ে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। আগামী অর্থবছর এটি বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা উচিত।
বর্তমান ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়ের প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপর কর নেই। পরের প্রথম এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং বাকি অর্থের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর বসে।
এ ছাড়া মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা হলো চার লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা হবে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা। আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যর জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে।
এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটির এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা, অন্য সিটির করদাতার জন্য ৪ হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্য এলাকার করদাতার জন্য ৩ হাজার টাকা দিতে হবে।
No comments