ঘোড়ার গোশত হালাল না হারাম?
ঘোড়া, খুড়ওয়ালা স্তন্যপায়ী প্রাণী। ঘোড়া মানুষের সম্পর্ক বহুযুগ ধরে। ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ মানুষ ঘোড়াকে ঘরে পোষা শুরু করে। ঘোড়া দ্রুতগামী চতুষ্পদ প্রাণী। যার পিঠে চড়া যায়। দ্রুতগামী বলে এর নাম তুরগ, তুরঙ্গম। ইসলামের ইতিহাসেও ঘোড়ার প্রদ্ধি ব্যাপক। প্রশ্ন ওঠে ঘোড়ার গোশত খাওয়া যাবে কী না।
ইসলামে ঘোড়ার গোশত খাওয়া নিয়ে আলেমদের মতপার্থক্য রয়েছে। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিসে এ ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়। এক হাদিসে হজরত জাবের (রা.) বলেন, খায়বারের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (স.) গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারি: ৫৫২০)
এই হাদিসে রাসুল (স.) ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এর মানে হলো- আগে অনুমতি ছিল না। শুধু যুদ্ধের সময় খাবারের প্রয়োজনে এই সুযোগ দেওয়া হয়। হ্যাঁ, ঘোড়ার গোশত নিষেদ্ধের ব্যাপারেও হাদিস রয়েছে। হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (নাসায়ি: ৮/২০৬, আবু দাউদ: ২/৫৩১
এই দুই হাদিস থেকেই মূলত ঘোড়ার গোশত খাওয়া নিয়ে আলেমদের মতবিরোধ। দুই হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেউ ঘোড়ার গোশত খাওয়াকে বৈধ বলেছেন, আবার কেউ বলেছেন অবৈধ। কিন্তু হাদিসশাস্ত্রের মূলনীতি হলো- যে বিষয়ের বৈধতা ও অবৈধতার ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়, সে বিষয়ে বিধান হিসেবে অবৈধতার দিক গ্রহণ করা হয়। কেননা এটাই সতর্কতা। তাছাড়া ফিকহশাস্ত্রের কিতাবে ঘোড়ার গোশত খাওয়া মাকরুহ বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- ঘোড়া জিহাদের কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই ব্যাপকহারে খাওয়া শুরু করলে জিহাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।
বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে যদিও ব্যাপকভাবে ঘোড়ার ব্যবহার হয় না; কিন্তু তা একেবারে বন্ধও হয়ে যায়নি। প্রতিরক্ষা বিভাগগুলোতে ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং নিয়মিত তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
সুতরাং জিহাদের কাজে ঘোড়ার ব্যবহার একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও তা খাওয়া উপরোক্ত হাদিসের কারণে মাকরুহ (তানজিহি) থাকবে।
No comments