Adsterra

লাতিন মুসলমানরা রোজা পালন করেন যেভাবে

লাতিন মুসলমানরা রোজা পালন করেন যেভাবে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

যখন কেউ ইসলামের কথা চিন্তা করে, তখন তার মনে হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ বা দক্ষিণ এশিয়ার রমজান মাসের বাজারের চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু একটি বিষয় হয়তো অনেকের কল্পনায় আসার সম্ভাবনাও কম। তা হলো, একটি লাতিন পরিবার যখন রমজানে ‘আরোজ কন গানদুলেস’ তথা মটর ও চালের তৈরি বিশেষ খাবার দিয়ে ইফতার করে অথবা একদল লাতিন মুসলিম যখন ঈদ উদযাপন করে, স্প্যানিশ ভাষাভাষী হয়ে আরবি ভাষায় নামাজ আদায় করে, তখন ধর্মের প্রতি তাদের যে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা থাকে, তা মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

লাতিন সংস্কৃতিতে ইসলামের উপস্থিতি অনেক পুরনো, যা দীর্ঘ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। ইসলামের সঙ্গে এর পরিচয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সংযোগ হলো স্পেনে মুসলমানদের অষ্টম থেকে পনেরো শতকের শাসন, যা স্প্যানিশ ভাষা ও সংস্কৃতিতে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, স্প্যানিশ ভাষার ৪ হাজারের বেশি শব্দ আরবি ভাষা থেকে এসেছে।

যদিও ১৪৯২ সালের পর স্পেন থেকে মুসলমানদের জোরপূর্বক বহিষ্কার করা হয়েছিল, তবুও আমেরিকায় ইসলাম প্রবেশ করেছে। লাতিন আমেরিকায় আনা কিছু আফ্রিকান ক্রীতদাস মুসলমান ছিলেন, যারা গোপনে তাদের ধর্ম পালন করতেন এবং স্থানীয় সংস্কৃতির ওপর সূক্ষ্মভাবে প্রভাব রাখতেন। পরবর্তীকালে সিরিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিন থেকে আরবিভাষী অভিবাসীরা আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও ভেনিজুয়েলার মতো দেশগুলোতে বসতি স্থাপন করেন, যার মাধ্যমে ইসলাম আরও বিস্তৃত হয়।

পিউ রিসার্চ সেন্টার অনুসারে, ২০১০ সালে আমেরিকার ৫১টি দেশে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৫৩ লাখ, যা বেড়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হয়েছে। এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়া। এখানে বহু লাতিনো ইসলামে নিজেদের জীবনবোধের মিল খুঁজে পান, আবার তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ও ছাড়তে হয় না। মেক্সিকান মুসলিম হ্যাজেল গোমেজ রিলিজিয়াস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সুন্দর বিষয় হলো, ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ত্যাগ করতে হয় না। বরং প্রত্যাশা করা হয় যে, আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে আরও সুন্দর করতে পারব। ধর্মীয় বিশ্বাসচর্চার মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারব।’

বিশ্বের অন্য মুসলমানদের মতো লাতিন মুসলমানরাও ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখেন। তবে তাদের খাবারের ধরন ভিন্ন হয়। প্রচলিত মধ্যপ্রাচ্যের খাবারের পরিবর্তে লাতিনো মুসলিমরা আরোজ কন গানদুলেস (মটর ও চাল দিয়ে তৈরি খাবার), পোয়ো গুইসাদো (মুরগির ঝোল), আরোজ কন লেচে (মিষ্টি, দুধ ও চাল দিয়ে তৈরি খাবর), সোরুয়োস (ভুট্টার পুডিং) প্রভৃতি খাবার রান্না করেন, যা হালাল বিধি মেনে প্রস্তুত করা হয়।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সম্প্রতি জুলিও অর্টিজ ও শিনোয়া মাতোস দম্পতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। মুসলিম ম্যাটার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তারা বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে আমরা রমজানের প্রস্তুতি নিই। রমজান সম্পর্কে আমাদের সন্তানকে উৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগ নিই, তারাবির নামাজ আদায়ের জন্য সময়সূচি তৈরি করি, স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে ইফতার বানাই, বাড়ি ও বাড়ির আশপাশ সাজাই এবং রমজান নিয়ে ঘরোয়াভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করি। এভাবে প্রতিটি লাতিন মুসলিম পরিবারই রমজান উদযাপনের নিজস্ব উপায় খুঁজে নেয়। কেউ বেশি সময় নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করেন, কেউ লাতিন মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে মসজিদের ইভেন্টে অংশ নেন।’

রমজানে সমাজভিত্তিক সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত লাতিন মুসলানরা রমজান উদযাপনের জন্য এমন স্থান খোঁজেন, যেখানে তারা একইসঙ্গে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ঠিক রাখতে পারেন এবং লাতিন আমেরিকান সংস্কৃতির বাহক হিসেবে অটুট থাকতে পারেন। মুসলমানদের বিশেষ একটি সংগঠন ‘ইসলাম ইন স্প্যানিশ’ ইভেন্টের মাধ্যমে লাতিন মুসলমানরা রমজানে একত্র হন, ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং একসঙ্গে ইফতার ভাগাভাগি করেন।


No comments

Powered by Blogger.