সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী: সফল ব্যবসায়ী-সংগঠক হিসেবেও ছিলেন অলরাউন্ডার
ছোটবেলা থেকে চাকরি না করার স্বপ্ন দেখলেও বহুজাতিক কম্পানি পাকিস্তান টোব্যাকোতে (বর্তমানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো) কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। প্রথমে ছিলেন করাচিতে পরে ১৯৭০ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বদলি হয়ে চলে আসেন ঢাকায়। মাঝে কয়েকমাস উচ্চ পদে ভালো বেতনে বিলেতে চাকরি করেন। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও ছিল বেশ দারুণ।
এত কিছুর পরও ব্যবসায়ী হওয়ার ইচ্ছায় নিশ্চিত জীবন ছেড়ে বেছে নিলেন ব্যবসা। তার হাত ধরেই শুরু হয় বাংলাদেশে উৎপাদিত চামড়ার জুতার বিদেশযাত্রা। শুধু তাই নয়, দেশের জুতার বাজারেও অন্যতম শীর্ষস্থান দখল করেছে তার প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স।
১৯৭২ সালে মঞ্জুর ইন্ডাস্ট্রিজ নামে কম্পানি করে কমিশনের ভিত্তিতে চামড়া বিক্রির ব্যবসায় নামেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী।
চার বছর পর ১৯৭৬ সালে ১২ লাখ ২২ হাজার টাকায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ওরিয়েন্ট ট্যানারি কিনে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপেক্স ট্যানারি। তারও ১৪ বছর পর যাত্রা শুরু করা অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার এখন দেশের শীর্ষ জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে অ্যাপেক্স গ্রুপে কাজ করেন ১৭ হাজারের বেশি কর্মী। তাদের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ১ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীকে শুধু সফল ব্যবসায়ীই নন, তিনি ছিলেন ১৯৯৬ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। যোগাযোগ, নৌপরিবহন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন। ২০০১ সালেও ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। এসবের বাইরেও সংগঠক হিসেবে ছিলেন অলরাউন্ডার। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি।
১৯৪২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তার বাবা স্যার সৈয়দ নাসিম আলী ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক। ১৯৩৩ সালে নিয়োগ পাওয়ার এক যুগ পর প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন তার বাবা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি দেয়। বড় ভাই এস এ মাসুদ যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। পরে তিনিও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন। বাবার মতো তিনিও ১৯৭৭ সালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। আর মেজ ভাই এস এ মওদুদ বিলেত থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দেন সিভিল সার্ভিসে। আর সেজ ভাই এস এ মনসুর ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী কলকাতাতেই স্কুল ও কলেজের পাট শেষ করেন। ১৯৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন। তারপর স্নাতকোত্তর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। থাকতেন সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন। সে সময় ডাকসুর ভিপি ছিলেন তার সহপাঠী রাশেদ খান মেনন। আর জি এস ছিলেন মতিয়া চৌধুরী (সাবেক কৃষিমন্ত্রী)।
No comments