Adsterra

ইতিকাফের গুরুত্ব, বিধিবিধান ও আমল

ইতিকাফের গুরুত্ব, বিধিবিধান ও আমল, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম ইতিকাফ। ইতিকাফের মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। দুনিয়ার মোহ দূর হয় হৃদয় থেকে। ইতিকাফের দিনগুলিতে মুমিন বান্দা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইবাদতে নিবেদিত করে। বিশেষ করে রমজানে এই ইবাদতের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর সন্ধান করার সুযোগ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকেই এ ধারা চলে আসছে। তাই একান্ত জরুরি কোনো ব্যস্ততা না থাকলে রমজানের শেষ দশক ইতিকাফে কাটানোই উত্তম।


ইতিকাফ কী

আরবি শব্দ ইতিকাফের অর্থ কোনো স্থানে অবস্থান করা বা নিজেকে সেখানে সীমাবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। দুনিয়াবি কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে শুধু ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকা।’


ইতিকাফ আগেকার নবীদের সময় থেকেই চলে আসছে। পবিত্র কোরআনে এ কথার উল্লেখ আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে হুকুম করি, তোমরা আমার ঘরকে সেই সব লোকের জন্য পবিত্র করো, যারা (এখানে) তাওয়াফ করবে, ইতিকাফ করবে এবং রুকু ও সিজদা আদায় করবে।’ (সুরা বাকারা: ১২৫)


ইতিকাফের প্রকার ও বিধান

ইতিকাফ তিন প্রকার :

এক. সুন্নত: রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ।

দুই. নফল: যেকোনো সময়ের ইতিকাফ।

তিন. ওয়াজিব: মান্নতের ইতিকাফ। /


তিন প্রকারের যেকোনো ইতিকাফ পুরুষের জন্য শুধু মসজিদে করার সুযোগ আছে। তবে নারীরা ঘরে নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবে। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজানের সূর্যাস্ত থেকে ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। তাই কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। আর কেউই ইতিকাফ না করলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা পরিত্যাগ করার জন্য সবাই গুনাহগার হবে। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে যিনি বা যারা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তারাই সওয়াব পাবেন।

মনে রাখার বিষয় হলো, ইতিকাফের জন্য নিয়ত করা আবশ্যক। নিয়ত ছাড়া ইতিকাফ শুদ্ধ হয় না। নিয়ত মনে মনে করলেই হয়ে যাবে। মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা আবশ্যক নয়।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ

ইতিকাফের সময় একজন ব্যক্তি সমাজের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করেন। তাই এর মাধ্যমে ব্যক্তির আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে ইসলামে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ খুব গুরুত্ব বহন করে।

রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফকে হজরত নবী করিম (সা.) গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেন। সাহাবায়ে কেরামও আমলটিকে খুব গুরুত্ব দিতেন। এমনকি নবীপত্নীগণও ইতিকাফ করতে ভুলতেন না।

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীরাও ইতিকাফ করতেন। (বুখারি: ২০২৬)

ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, ‘অনেক আমল তো নবীজি (সা.) কখনো করেছেন আবার কখনো ছেড়েও দিয়েছেন। কিন্তু মদিনায় হিজরত করার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফের আমলটি তিনি কখনোই ছাড়েননি।’ (ফাতহুল বারি: ৪ / ২৮৫)


ইতিকাফের প্রস্তুতি

ইতিকাফের সময় শুধু আল্লাহর ইবাদতেই মশগুল থাকতে হবে। ইতিকাফের সময় সুস্থ থাকাও প্রয়োজন। তাই ইতিকাফের আগে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া ইতিকাফের সময় প্রয়োজনীয় কোনো জিনিসের কারণে যেন ইবাদতে মনোযোগ নষ্ট না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় আসবাবগুলো আগে থেকেই সঙ্গে নিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। যেমন বিছানাপত্র, পরিধেয় কাপড়, টয়লেট টিস্যু, সাবান-শ্যাম্পু, পানি পানের পাত্র, প্লেট-বাটি, মূল্যবান জিনিস সংরক্ষণের জন্য তালা দেওয়া যায়—এমন ব্যাগ বা লাগেজ ইত্যাদি। পাশাপাশি সঙ্গে কিছু ধর্মীয় বইও রাখা যেতে পারে।


ইতিকাফের আমল

ইতিকাফ হতে হবে আমলে ভরপুর। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজেই ইতিকাফের সময়গুলো ব্যয় করা প্রয়োজন। তাই ইতিকাফের আগে ব্যক্তিগত বা সাংসারিক ব্যস্ততাগুলো শেষ করা উচিত, যেন ইতিকাফে অন্যমনষ্ক হতে না হয়। দুনিয়াবি কোনো ব্যস্ততা বা কাজ যেন ইতিকাফে না হয়, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, হাদিস অধ্যয়ন, ধর্মীয় বই পাঠ, দোয়া-ইস্তিগফার, জিকির ও তাসবিহে কাটাতে হবে পুরোটা সময়।

সর্বোপরি দুনিয়াবি চিন্তা, কাজ-কর্ম থেকে বিরত থেকে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও লাইলাতুল কদর পেতে ইবাদাত-বন্দেগিতে মশগুল থাকাই ইতিকাফের মূল লক্ষ্য।

রমজানের প্রকৃত সফলতা অর্জনে যেসব ইবাদতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়—ইতিকাফ তার মধ্যে অন্যতম। আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকার এক অনন্য মাধ্যম ধরা হয় ইতিকাফকে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইতিকাফের বিষয়গুলো জেনে-বুঝে যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন।


No comments

Powered by Blogger.