Adsterra

মবনৈরাজ্য প্রতিহত করুন

মবনৈরাজ্য প্রতিহত করুন, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh n

বাংলাদেশে বর্তমানে ‘মব’ শব্দটি আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, একদল লোক দল বেঁধে কোনো একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করছে। যখন যাকে খুশি ডাকাত, ছিনতাইকারী, চোর আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ধর্মীয় জজবা কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আক্রমণ হচ্ছে। যদিও এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা নেই। সুস্পষ্টভাবেই এগুলো ফৌজদারি আইনে গুরুতর অপরাধ। অথচ এসব ঘটনায় দুষ্কৃতকারীরা আইনের আওতায় আসছে কম। গত বছরের আগস্ট মাসে গণআন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে হাসিনা আমলের শেষ দিকে পুলিশ দিয়ে বিপুলসংখ্যক নাগরিককে হত্যা করায় পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা নাই হয়ে যায়। ক্ষোভে থাকা জনতা দেশের বেশিরভাগ থানা জ্বালিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে শিথিলতা দেখা দেয় এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে । এই সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা মবের নাম করে নানা জায়গায় তাণ্ডব চালাচ্ছে।

আইন হাতে তুলে নেওয়া এমন সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত মানুষের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষক, বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা কর্মকর্তা। জবরদস্তি করে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা, মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া, আদালত এলাকায় আসামিদের ওপর হামলা, পর্যটন এলাকায় নারী পর্যটককে হেনস্তার ঘটনা ঘটছে। ভাঙা হয়েছে মাজার ও মন্দির। সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পিটিয়ে মেরে মেলা হয়েছে দুজনকে। ঢাবির ফজলুল হক হলের ছাত্ররা তোফাজ্জল নামক এক যুবককে চোর সন্দেহে আটক করে। একদফা মারধর করে তাকে খাওয়ানো হয়। আবার মারধর করা হলে তিনি মারা যান। দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের এ রকম নারকীয় আচরণ গোটা দেশের মানুষকে স্তম্ভিত করে দেয়।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যমতে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে ১ হাজার ৯টি গণপিটুনির ঘটনায় ৭৯২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৭৬৫ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০১টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালে। এসব ঘটনায় গণপিটুনিতে মারা গেছে ১৭৯ জন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত বছর আগস্ট থেকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনায় কমপক্ষে ১১৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৭৪ জন। এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা তুলে ধরে বলা হয় ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম, বগুড়া, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, খুলনা, গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশালে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা বা এফআইআর হলেও সুষ্ঠু তদন্ত বা গণপিটুনিতে জড়িত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের ঘটনা খুবই কম। দোষীরা আইনের আওতায় না আসায় দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের বিচারহীনতার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, গণপিটুনি মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা ১৯৪৮-এর ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেকের জীবন, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে। অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী, কারও প্রতি নির্যাতন, অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না। এইচআরএসএস গণপিটুনির মতো ঘটনা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গণপিটুনির ঘটনায় দায়ীদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা, এলাকাভিত্তিক সচেতনতা বাড়াতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানায়।

আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে দেশের মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও নৃশংসতা লক্ষ করা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন স্বৈরশাসন থাকার প্রভাবে দেশের মানুষের মধ্যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ফায়দা নিচ্ছে সুযোগসন্ধানীরা। বর্তমানে মবের নামে যা হচ্ছে এর সঙ্গে কোনো ছাত্র বা রাজনৈতিক দলের বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই। চিহ্নিত অপরাধীরাই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। একই সঙ্গে আতঙ্কজনকভাবে বলতে হয়, এক্ষেত্রে পুলিশের রয়েছে রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তা! একজন মানুষ কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। এই মবনৈরাজ্য সরকারকেই প্রতিহত করতে হবে। না হলে চারদিক থেকে বিপন্নতা গ্রাস করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.