জামিন নিয়ে হাওয়া দুই সন্ত্রাসী
কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল ও খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন পলাতক হয়েছেন। হাজিরার দিনে আদালতে অনুপস্থিত থাকায় ইতিমধ্যে পলাতক হিসেবে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, আরও কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর মতো এ দুজনও বিদেশে চলে গেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী বিভিন্ন সময়ে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁরা এক থেকে দুই যুগের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে আবার পুরোনো মার্কেট দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। কারও কারও বিরুদ্ধে নতুন মামলাও করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরের পিচ্চি হেলাল কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান ১৬ আগস্ট। এর আগের দিন মুক্তি পান হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সময় জামিনে মুক্তি পান তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, মিরপুরের আব্বাস আলী, রায়েরবাজারের খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও মালিবাগ-মগবাজারের খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজিরার তারিখ ছিল পিচ্চি হেলাল ও টিটনের। তবে তাঁরা হাজিরা দেননি। আদালত সেদিন তাঁদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) নির্দেশ দেন আদালত। ডিএমপি সদর দপ্তর এ বিষয়ে এক চিঠিতে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে বলে। একই সঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জ অফিসকেও বিষয়টি জানানো হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, এ দেশে সন্ত্রাসীদের জন্য জায়গা হবে না। জামিনে কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।
সন্ত্রাসীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলছে, জামিনে মুক্তি পাওয়া কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী দেশ ছেড়েছেন। তাঁদের মধ্যে পিচ্চি হেলাল ও টিটনও রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
সানজিদুল ইসলাম ইমনের মা সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, তাঁর ছেলে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বিদেশে চলে গেছেন।
পুলিশের সূত্র বলছে, প্রায় দুই যুগ পর কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করা হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকার ‘দখল’ নিতে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের বিরোধের জেরে ওই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এদিকে ১০ জানুয়ারি নিউ এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে দুই ব্যবসায়ীকে কোপানোর ঘটনায় করা মামলায় ইমনকে প্রধান আসামি করা হয়। হামলার শিকার দুই ব্যবসায়ীর একজন ওয়াহেদুল হাসান দীপু। তিনি মামলার বাদী এবং ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি। তিনি পিচ্চি হেলালের বড় ভাই। মার্কেট দখল নিয়ে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
পরে ইমনের মা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তাঁর ছেলে ওই ঘটনায় জড়িত নয়।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক কার্যক্রম ও তাঁদের ওপর পুলিশের কোনো নজরদারি রয়েছে কি না—জানতে চাইলে ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। আদালত থেকে জামিন পেয়ে তাঁরা কারাগার থেকে বের হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিলের আবেদন করবে ডিএমপি।
অপরাধ নিয়ে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, জামিনে বের হওয়া সন্ত্রাসীরা আবার পুরোনো অপরাধের নেটওয়ার্ক সচল করছে কি না, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন। তা না হলে এই দুর্বল পুলিশি ব্যবস্থার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এর আগেই তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
No comments