Adsterra

টিউলিপ ফ্ল্যাট কিনে টাকা দেননি

টিউলিপ ফ্ল্যাট কিনে টাকা দেননি, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে রিজওয়ানা সিদ্দিক (টিউলিপ) ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ৯২০ টাকা দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের নির্মিত গুলশানের ২৪৩৬ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। কিন্তু তিনি ফ্ল্যাটের মাত্র দুই লাখ টাকা পরিশোধ করেন। অবশিষ্ট টাকা না দিয়ে তিনি ফ্ল্যাট দখলে নেন। তাকে ফ্ল্যাটের পাওনা বাবদ ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ৯২০ টাকা পরিশোধ করতে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলে তিনি তা পরিশোধ করেননি। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ জব্দের সময় বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে আসে।


দুদকের তথ্যমতে, গত ১১ মার্চ মহানগর সিনিয়র জজ আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানার নামে থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং তাদের ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাদের বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

 

দুদক ও আদালত তথ্য বলছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের যেসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের গুলশানের ৭১ নম্বর রোডের ১১/এ ও ১১/বি নম্বর প্লটে নির্মিত ইস্টার্ন হারমনি ভবনের ২৪৩৬ বর্গফুট আয়তনের বি/২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি রয়েছে। এ ফ্ল্যাট ক্রয় নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য পায় দুদক।


দুদকের তথ্যমতে, গুলশানের ৭১ নম্বর রোডের ১১/বি নম্বর প্লটে নির্মিত ইস্টার্ন হারমনি ভবনের ২৪৩৬ বর্গফুট আয়তনের বি/২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি ক্রয়ের জন্য টিউলিপ সিদ্দিকীর সঙ্গে ইস্টার্ন হাউজিং কোম্পানির চুক্তি হয়। তাতে ফ্ল্যাটের মূল্য ২৯ লাখ, গ্যারেজ ছয় লাখ, অতিরিক্ত কাজের বিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪০০ টাকা, ভ্যাট বাবদ ৮৭ হাজার, রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ২০ টাকা, অ্যাসোসিয়েশন চার্জ ৩৫ হাজার, ইউটিলিটি চার্জ ৭০ হাজার এবং ইন্টারকম চার্জ ৭ হাজারসহ মোট ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ৯২০ টাকা। টিউলিপ সিদ্দিকী গ্যারেজ ক্রয় বাবদ ২ লাখ টাকা প্রদান করে ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ও দখল বুঝে নেন। তিনি ইস্টার্ন হাউজিং কোম্পানির পাওনা অবশিষ্ট ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ৯২০ টাকা পরিশোধ করেননি।


প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০১১ সালের ১২ জুলাই ইস্টার্ন হাউজিং কোম্পানি ফ্ল্যাটের পাওনা পরিশোধ করতে টিউলিপ সিদ্দিকীকে চিঠি দেন। কোম্পানি ম্যানেজার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং কোম্পানির বিশেষ বিবেচনায় ব্যতিক্রমী কেস হিসেবে ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ৯২০ টাকা বকেয়া রেখে ইস্টার্ন হারমনির বি/২০১ নম্বর ফ্ল্যাটের পজিশন ও রেজিস্ট্রেশন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও আপনি প্রতিশ্রুতি মোতাবেক পাওনা টাকাগুলো পরিশোধ করছেন না। তাই টাকাগুলো ২০১১ সালের ১১ আগস্টের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য বলা হলো।


জানা গেছে, ওই চিঠি দেওয়ার পর ও টিউলিপ সিদ্দিক ফ্ল্যাট ক্রয়ের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেননি। টাকা পরিশোধ করায় তাকে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পুনরায় চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ২১ দিনের (১০ অক্টোবর) মধ্যে সমস্ত বকেয়া পরিশোধের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি টাকা পরিশোধ করেননি। পরে তাকে ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি আবারও চিঠি দেওয়া হয়। ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, আপনাকে আমাদের কোম্পানি থেকে দুই দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত আপনার কাছ থেকে ফ্ল্যাটের সমুদয় বকেয়া পরিশোধের ব্যাপারে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। এবার আমরা আপনাকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দিয়ে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি আপনার সমুদয় বকেয়া পরিশোধ করে আপনার ফ্ল্যাটটির অ্যাকাউন্টস ক্লোজ করার ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত ফ্ল্যাটের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেননি।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের অপারেটিভ ডাইরেক্টর (অ্যাডমিন) শেখ শমসের আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে দুদকের তদন্ত চলমান থাকায় আমরা কিছু বলতে পারব না। আমাদের কাছে দুদক যেসব তথ্য চেয়েছে আমরা তা জানিয়ে দিয়েছি। দুদক ফ্ল্যাটের সব কাগজপত্রসহ ফাইল জব্দ করে নিয়ে গেছে। 


দুদকের তথ্যমতে, আদালতের নির্দেশে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ছয়টি (মোট ৬০ কাঠা) প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদক। সংস্থাটির অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্য, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক কর্মকর্তাসহ মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এপিএস-২ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের দুজনসহ মোট ২৭ জনের বিরুদ্ধে গত ১০ মার্চ বিচারিক আদালতে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেয় কমিশন। 


No comments

Powered by Blogger.