Adsterra

শেখ হাসিনার শাসনে ‘বিশাল ক্ষতি’ থেকে উঠে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস

দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

শেখ হাসিনার শাসনে ‘বিশাল ক্ষতি’ থেকে উঠে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে বাংলাদেশ : ড. ইউনূস

শেখ হাসিনার শাসনে ‘বিশাল ক্ষতি’ থেকে উঠে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে বাংলাদেশ, দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral New

৮৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূস নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ক্ষুদ্রঋণের ধারণা দিয়ে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেয়েছেন। রাজনীতি থেকে তিনি অনেকটাই দূরে ছিলেন, কারণ শেখ হাসিনা তাঁকে বরাবরই হুমকি হিসেবে দেখতেন। দীর্ঘদিন তাঁকে নানাভাবে হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে।

কিন্তু দেশের ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যখন তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনার অনুরোধ করেন, তখন তিনি দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশকে যে অবস্থায় রেখে গেছেন, তা ভয়াবহ। এ যেন আরেকটি গাজা, তবে ধ্বংস হয়েছে শুধু ইমারত নয়, রাষ্ট্রের পুরো কাঠামো।’


নতুন শুরুর আশা, কিন্তু..

বাংলাদেশে ইউনূসের প্রত্যাবর্তন অনেকের কাছে আশার আলো হয়ে এসেছিল। গত ছয় মাসে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে।

হাসিনার শাসনে গুম, হত্যা ও নির্যাতনে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচার শুরু হয়েছে। গোপন বন্দিশিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শত শত মামলা হয়েছে, যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ইউনূস জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে দেশের প্রথম অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।


আইনশৃঙ্খলার অবনতি

ঢাকার রাস্তায় এখনো অস্থিরতা বিরাজ করছে। ইউনূসের জনপ্রিয়তা থাকলেও, তাঁর শাসনক্ষমতা ও সংস্কারের গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন চায়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমির চৌধুরী বললেন, ‘এই সরকার কেবলই অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা ছিল। এখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় নেই, তাই সংস্কার বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’


অপরাধ বেড়েছে, নিরাপত্তাহীনতা তীব্র

অনেক পুলিশ সদস্য এখনো কাজে ফিরতে রাজি নন। ফলে অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। ঢাকায় গ্যাং অপরাধ ছড়িয়ে পড়ছে, সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে গত সোমবার বিক্ষোভ হয়েছে, যেখানে তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে।

নতুন রাজনৈতিক দলের প্রধান ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম, বললেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সেনাবাহিনীর সতর্কবার্তা

বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি বলেছেন, ‘দেশ এখন নৈরাজ্যের মধ্যে আছে। এই বিভাজন চলতে থাকলে দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে।’

তবে ইউনূস বলছেন, ‘সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। তাঁদের কাছ থেকে কোনো চাপ নেই।’ কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, সেনাপ্রধানের বক্তব্য সরকারের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা।


হাসিনার শাসনের উত্তরাধিকার

শেখ হাসিনার সরকারকে ‘ডাকাতদের সরকার’ বলে আখ্যা দিয়ে ইউনূস বলেন, ‘কেউ বিরোধিতা করলে গুম করে দেওয়া হতো। নির্বাচন হলে সব আসন হাসিনার দখলে চলে যেত। ব্যাংকের টাকা লুট করতে চাইলে, কোটি কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হতো, যা ফেরত দিতে হতো না।’

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন ভয়াবহ অবস্থায়। হাসিনার আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে আছেন তাঁর ভাগ্নি যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।

বাংলাদেশ থেকে লুট হওয়া ১৭ বিলিয়ন ডলার উদ্ধারে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডে তদন্ত চলছে। তবে এসব অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম।


ধর্মীয় উগ্রবাদ বাড়ছে

ইউনূসের শাসনে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রভাব বেড়েছে। জামায়াতে ইসলামীসহ নিষিদ্ধ দলগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে, জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। সম্প্রতি মেয়েদের একটি ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করে দেয় স্থানীয় কট্টরপন্থী গোষ্ঠী।

শুক্রবার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে।


ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন

শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হলেও ভারত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে ফেরা ইউনূসের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নয়।


ইলন মাস্ককে আমন্ত্রণ

ইউনূস ইলন মাস্ককে বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালুর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইউনূস আশা করছেন, ট্রাম্প বাংলাদেশকে ‘ভালো বিনিয়োগের সুযোগ’ হিসেবে দেখবেন।

‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আমি তাঁকে বলব, আসুন, আমাদের সঙ্গে চুক্তি করুন।’ তবে ইউনূস স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘যা-ই হোক, আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থামবে না।’

No comments

Powered by Blogger.