তসলিমাকে রাজ্যে ফেরানোর আর্জি বিজেপি সাংসদের
বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য রাজ্যসভায় তসলিমার পশ্চিমবঙ্গে ফেরার আবেদন করেন। এতে খুশি তসলিমা। ২০০৭-এ কলকাতায় তাকে নিয়ে দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় শহর ছাড়তে হয় সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনকে। তারপর কেটে গেছে ১৮ বছর। প্রায় দুই দশক পরে কি ফের কলকাতায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হলো তার।
সাংসদের বক্তব্য সোমবার রাজ্যসভায় জিরো আওয়ারে বক্তৃতা করার সময় বিজেপির সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য তসলিমাকে কলকাতায় ফেরানোর আবেদন করেন।
তিনি বলেন, সাহিত্যিককে কলকাতা শহরে থাকার অনুমতি দিক সরকার। তদানীন্তন কিছু কংগ্রেস নেতাদের প্ররোচনায় কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তসলিমা। সেই নেতারা এখন পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের মাথা। নিজের বক্তব্যে তৎকালীন বাম সরকারেরও সমালোচনা করতে ছাড়েননি শমীক। অন্যান্য নারীবাদী বিষয়ে সোচ্চার হলেও তসলিমার ক্ষেত্রে তারা মৌন কেন সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রাজ্যসভায় শমীকের এই বক্তব্যে স্বভাবতই খুশি তসলিমা। মানবাধিকারের পক্ষে সওয়াল করার জন্য নিজের ফেসবুকে শমীককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বাম সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্তের কথা মনে করিয়ে তিনি বলেন, তার পর আর কেউ তার হয়ে সওয়াল করেননি। বর্তমান রাজ্য সরকার তার লেখা মেগা সিরিয়াল বন্ধ করে দেয় বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি লেখেন, জানিনা, কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কি না, তবে তিনি যে আমার কথা মনে করেছেন, মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে নিজের জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত আমাকে বাংলায় লেখালেখি চালিয়ে যেতে হলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি-পরিবেশে বাস করা আমার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ, তা তিনি উপলব্ধি করেছেন বলে তাঁকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। তার পরে সব কিছু। ধর্মীয় মেরুকরণের খেলা সিপিএম অবশ্য শমীকের এই বক্তব্যে ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে ধর্মীয় মেরুকরণের ইঙ্গিত দেখছে।
সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি এবং তৃণমূল একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিজেপি ২০১৪ থেকে সরকার চালাচ্ছে। এতদিনেও কেন তসলিমাকে স্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়া হল না। তসলিমাকে ফেরত আনার পক্ষে সওয়াল পারতপক্ষে ভোটের আগে তৈরি করা একটা ইস্যু বলে মনে করছেন তিনি।
তার কথায়, বিজেপি এবং তৃণমূল যে সাংঘাতিক ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে, তসলিমা-প্রসঙ্গ তারই একটি অংশ। ১৯৯৪-এ লজ্জা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই স্বভূমি থেকে বিতাড়িত তসলিমা। দীর্ঘদিন কলকাতায় থাকলেও ২০০৭-এ তার বই দ্বিখণ্ডিত নিয়ে শহরে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তার সুরক্ষার জন্য তাকে শহর ছাড়তে বলা হয়। এর পর পুলিশী নিরাপত্তায় দিল্লি এবং জয়পুরে কাটিয়ে ভারত ছেড়ে ইউরোপে থাকতে শুরু করেন তিনি। পরে দিল্লিতে ফিরে আসেন তিনি। এখন সেখানেই বসবাস করেন তসলিমা।
No comments