তারুণ্যের সফলতা
মানুষের জীবনে তারুণ্য এমন একটা সময়, যেখান থেকে সফলতার পথচলাটা মূলত শুরু হয়। তরুণ বয়সটা তাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদের জন্য থাকে কিছু আদর্শ। বিশ্বে যেমন তারুণ্যের অন্যতম আদর্শ হিসেবে আছেন বিল গেটস, স্টিভ জবস, মার্ক জাকারবার্গ, টমাস আলভা এডিসনসহ অসংখ্য মানুষ। সামান্য উদ্যোক্তা থেকে তারা হয়ে উঠেছেন মহীরুহ। হয়েছেন তরুণদের আইকন। যেমন বিল গেটস তার সফলতার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরাও তরুণ ছিলাম। তবে আমাদের সঙ্গে ছিল সঠিক দিকনির্দেশনা, উত্তম আইডিয়া আর দারুণ উদ্দীপনা।’যদিও তারুণ্যের সফলতার সূত্র খুঁজতে গেলে অনেক কিছুরই হদিস মিলবে। তবে মূলত চারটি কথাতেই সবকিছু বলে দিয়েছেন বিল গেটস। ১. তারুণ্য, ২. সঠিক দিকনির্দেশনা, ৩. উত্তম আইডিয়া এবং ৪. দারুণ উদ্দীপনা।
এর বাইরেও আরও কিছু বিষয় রয়েছে সফলতা অর্জনের পথে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো -
তুমুল মানসিক শক্তি : কাজ করার, পরিশ্রম করার মানসিক শক্তি থাকতে হবে। এই মানসিক শক্তিই শারীরিক শক্তির জোগান দেবে।
নিয়ন্ত্রিত আবেগ : নিজের কাজের প্রতি আবেগ থাকা খুবই জরুরি। যে কাজটা করতে হবে, সে কাজকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে না পারলে সফলতার পথও তৈরি হবে না। মানসিক দৃঢ়তা যেকোনো কঠিনকে সহজ করে তুলতে পারে। তবে আবেগ হতে হবে নিয়ন্ত্রিত।
দায়িত্বজ্ঞান : সফল উদ্যোক্তাদের দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন হতেই হয়। কঠোর দায়িত্বজ্ঞান ছাড়া কখনোই সফলতা আশা করা যায় না।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা : সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতে হবে। আর কখনো কোনো সিদ্ধান্ত ভুল হলে অন্যের ওপর সে ভুলের দায় না চাপিয়ে, ভুল মেনে নিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে স্টিভ জবসের একটি উক্তি হলো, ‘কখনো নতুন কাজ শুরু করেছ, ভুল হতেই পারে। সবচেয়ে ভালো, ভুল কাটিয়ে উঠতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া।’
নিজের প্রতি বিশ্বাস : আমি পারব, আমাকে দিয়ে হবে- এই বিশ্বাস থাকতেই হবে। এই বিশ্বাসের জোরেই সব বাধা উড়ে যাবে। বিশ্বাসের অভাব হলে কোনো কিছুই সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।
অধ্যবসায় : কাজের প্রতি অটল থাকা, ধারাবাহিকভাবে কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়া, কাজে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করাই একজন সফল উদ্যোক্তার লক্ষ্য। সফল হতে হলে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।
নিয়মানুবর্তিতা : নিয়ম মেনে কাজ করা সফলতার অন্যতম শর্ত।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য : কাজ শুরুর আগে লক্ষ্য স্থির করতে হবে। তারপর সেই লক্ষ্যের প্রতি স্থির থাকতে হবে এবং লক্ষ্য মাথায় রেখে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। লক্ষ্যবিহীন কোনো কাজেই সফলতা আসে না।
ধৈর্য : কাজে নানান প্রতিকূলতা আসতে পারে। সেই প্রতিকূল সময়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে সঠিক সময়ের জন্য।
ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা : ব্যবসা করতে চাইলে অথবা যেকোনো উদ্যোগ নিতে চাইলে, বিশেষ করে ব্যতিক্রম কিছু করতে চাইলে ঝুঁকি কিন্তু নিতেই হয়। ঝুঁকি নেওয়ার সাহস ও সক্ষমতা থাকা দরকার।
কৌশলী : প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায় ভালো করতে হলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কোন সময় কীভাবে ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে হয়, কখন কী পণ্য বাজারে চাহিদা তৈরি করে, অন্য কোম্পানি থেকে কীভাবে আলাদা হওয়া যায়-এসব বিষয়ে কৌশলী হতে হয়।
চাপ নেওয়ার মানসিকতা : কাজে ঝামেলা থাকবেই। সেই ঝামেলাকে মেনে নিয়ে, অর্থাৎ চাপ সামলে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা থাকা খুবই জরুরি। কাজ ও অন্যান্য চাপের মধ্যে ধীরস্থির হয়ে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে সফলতার সুযোগ তৈরি হয়।
ব্যক্তিত্ব : উদ্যোক্তাকে তার ব্যক্তিগত অবস্থানের প্রতি অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। এ বিষয়ে ওয়ারেন বাফেটের উক্তি- ‘সুনাম অর্জন করতে হয়তো ২০ বছর লাগে, কিন্তু মাত্র পাঁচ মিনিটেই তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’ কাজেই নিজের ব্যক্তিত্বকে সে পর্যায়ে রাখতে হবে।
একই ভুল বারবার না করা : একই রকম ভুল বারবার করা কোনোভাবেই সফলতার পথ সৃষ্টি করতে পারে না। বরং একটি ভুল থেকে আরও দশটি ভুল না করার জ্ঞান থাকা জরুরি।
তৃপ্ত থাকা : নিজের কাজের প্রতি তৃপ্ত থাকাও সফলতার পথ তৈরি করে এবং কাজের ফলাফলের তৃপ্তিও অনুপ্রেরণা ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করে। কিন্তু অতিরিক্ত তৃপ্তি আবার সফলতার পথে বাধা হয়েও দাঁড়াতে পারে।
নিজের
প্রতি
বিশ্বাস
: নিজের প্রতি বিশ্বাস বা আত্মবিশ্বাসও থাকা
দরকার।
No comments