কাঁচা লবণ খেলে হতে পারে যেসব ক্ষতি
ভাতের সঙ্গে লবণ খান না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। অথচ এই কাজটি দিনের পর দিন করার ফলে শরীরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তা অনেকেরই অজানা। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি লবণ খেলে শরীরের বেজে যেতে পারে বারোটা। এমনকী সঙ্গী হতে পারে একাধিক জটিল অসুখ। শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়ামের কারণে সারা বিশ্বে প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ মারা যায়। আপনি যদি স্বাদ অনুযায়ী হিসেবেই অতিরিক্ত লবণ খান তবে তা আপনার জন্য বিষের সমতুল্য হতে পারে। তাই কাঁচা লবণ খাওয়া একদমই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়। এর থেকে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই যেকোনো বয়সের ব্যক্তিকেই কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। তবে প্রতিদিন একই পরিমাণে এর ব্যবহার অস্বাস্থ্যকর হিসেবে ধরা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ প্রতিদিন প্রয়োজনের দ্বিগুণ লবণ খান। বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ১০.৭৮ গ্রাম লবণ খান, যা দুই চা চামচের সমান। অনেকে মনে করেন বিট লবণ খেলে অতটা ক্ষতি হয় না। কিন্তু এই ধরনের লবণেও রয়েছে সোডিয়ামের ভাণ্ডার। তাই বিট লবণ খেলেও সমস্যা হতে পারে। তাই কোনো ধরনের লবণই বেশি মাত্রায় খাওয়া ঠিক না। জানুন ভাতের সঙ্গে লবণ খেলে শরীরের কী কী ক্ষতি হয়।
রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে
যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তারা লবণ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। এর কারণ হল, সোডিয়াম-জাতীয় খাবার রক্তের চাপ বাড়ায়। ফলে ধনীর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রক্ত প্রবাহিত হয়। সেইসঙ্গে এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যার ঝুঁকি। যাদের উচ্চ রক্তচাপ নেই তারাও অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে
বেশি লবণ খেলে কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। কিডনি ভালো না থাকলে তার প্রভাব পড়বে পুরো শরীরেই। তাই সময় থাকতে সতর্ক হোন।
পানির পিপাসা
অতিরিক্ত লবণ-জাতীয় খাবার খাওয়া মুখ শুষ্ক করে ফেলে। তাই তেষ্টা বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হল, দেহ সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে পানির ঘাটতি অনুভব করে। শুধু নোনতা খাবার খাওয়াই না বরং লবণ ও গরম পানি দিয়ে ‘গারগল’ করা হলেও কয়েক মিনিট পরে মুখে শুষ্ক অনুভব হয়।
হার্টের হবে ভয়াবহ ক্ষতি
আজকাল অনেকেই কম বয়সে হৃদরোগের ফাঁদে পড়ে কষ্ট পান। তাই বিপদের ফাঁদে পড়ার আগেই হার্টের স্বাস্থ্য ফেরানোর কাজে লেগে পড়ুন। আর সেই কাজে সাফল্য পেতে চাইলে সবার প্রথমে কাঁচা লবণ খাওয়া ছাড়তে হবে। এমনকি এড়িয়ে চলতে হবে লবণ সমৃদ্ধ ফাস্টফুড। ব্যস, তাহলেই প্রেশার থাকবে নিয়ন্ত্রণে। যার ফলে কাছে ঘেঁষতে পারবে না হার্ট অ্যাটাক, অ্যারিদমিয়ার মতো অসুখ। তাই আজ থেকেই কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করে দিন।
ফুলে থাকবে পেট
আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন শুধু আজেবাজে খাবার খেলেই বোধহয় পেট ফুলে থাকে। তবে বিষয়টা একবারেই তেমন নয়। বরং অত্যধিক লবণ খেলেও ফুলে থাকতে পারে পেট। আসলে লবণে উপস্থিত সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখে। যার ফলে পেটের নিচের দিকে সাময়িকভাবে পানি জমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ফেঁপে থাকতে পারে পেট। এমনকি চলে যেতে পারে খিদে। তাই পেটের হাল ফেরাতে চাইলে লবণ খাওয়া কমান।
প্রস্রাবের বেগ বাড়ায় লবণ
শরীরে লবণের আধিক্য হলে কিডনি মূত্রের মাধ্যমে তা বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এটা একবারেই স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তাই এমন পরিস্থিতিতে বারবার টয়লেটে যাওয়াটা একবারেই স্বাভাবিক।
মাথা ব্যথার ভ্রূকুটি
আপনি কি নিয়মিত মাথা ব্যথার ফাঁদে পড়ে কষ্ট পান? তাহলে ভুলেও প্রতিদিন কাঁচা লবণ খাবেন না। কারণ, লবণ ব্লাড প্রেশার বাড়ানোর কাজে একাই একশো। আর রক্তচাপ বাড়লে যে চট করে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যাবে, এই কথাটা আলাদা করে বলতে হবে না নিশ্চয়ই। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত মাথার পেছনের দিকটা টনটন করে। অনেক সময় মাথার সামনের দুই পাশও দপদপ করে উঠতে পারে। তাই চেষ্টা করুন কাঁচা লবণ না খাওয়ার।
দিনে ৪ থেকে ৭ গ্রাম লবণ একজন ব্যক্তি খেতে পারেন। ছোট চামচের এক চামচ লবণ খাবারে মেশাতে পারেন, তার বেশি নয়। এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও মতামত হিসেবে দেওয়া। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া বা যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
No comments