Adsterra

শবে কদর তালাশ করতে হয় কীভাবে

শবে কদর তালাশ করতে হয় কীভাবে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh

শবে কদর বা লাইলাতুল কদর ইসলামে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাত। এই রাতেই কোরআনুল কারিম নাজিল হয়েছে। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’ (সুরা কদর: ১-৫)


পবিত্র রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হলো শবে কদর বা লাইলাতুল কদর তালাশ করা। তালাশ করার শাব্দিক অর্থ অনুসন্ধান হলেও এখানে এর অর্থ হবে ইবাদতে কাটানো, এই রাতের কল্যাণ লাভের প্রার্থনা এবং তাওবা-ইস্তেগফার করা। যেন আল্লাহ লাইলাতুল কদরের বরকত থেকে বঞ্চিত না করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘এ মাসে (রমজানে) এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সত্যিই বঞ্চিত হলো।’ (সুনানে নাসায়ি: ২১০৮)


শবে কদর তালাশ করার জন্য প্রিয়নবীজি (স.) পুরো রমজানেই ইবাদতে আত্মমগ্ন থাকতেন। দ্বিতীয় দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন। শেষ দশকে ইতেকাফে বসে যেতেন। কখনও তিনি দ্বিতীয় দশকেও ইতেকাফ করেছেন শবে কদরের আশায়। এমনকি শুরুর দিকে রমজানের প্রথম দশকেও তিনি শবে কদর পেতে ইতেকাফ করেছেন। পরে নবীজি বললেন- আমাকে বলা হলো, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকে। অতএব, কেউ ইতেকাফ করতে চাইলে (শেষ দশকে) ইতেকাফ করতে পারে। ফলে লোকজন তাঁর সঙ্গে ইতেকাফ করল। (মুসনাদে আহমদ: ১১৭০৪)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান করো। (সহিহ বুখারি: ২০২০, সহিহ মুসলিম: ১১৬৯)

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন: আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, তারপর আমার পরিবারের একজন আমাকে জাগিয়ে দিলেন, ফলে আমি তা ভুলে গেলাম। আপনারা লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ রাতে অনুসন্ধান করুন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬৬) অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করো।’ (বুখারি: ২০১৭) অর্থাৎ শবে কদর তালাশে রমজানের শেষ দশক গুরুত্বপূর্ণ, শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


শবে কদরের রাতটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এবং এ রাতে ফজর পর্যন্ত রহমত বর্ষণ করা হয়। এই রাতে ইবাদতকারীরা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করে থাকেন। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৩৫)


এ বছর (২০২৫) শবে কদর অনুসন্ধানের রাতগুলো হলো— ২১ রমজান (২২ মার্চ) শনিবার রাত। ২৩ রমজান (২৪ মার্চ) সোমবার রাত। ২৫ রমজান (২৬ মার্চ) বুধবার রাত। ২৭ রমজান (২৮মার্চ) শুক্রবার রাত। ২৯ রমজান (৩০ মার্চ) রোববার রাত।


লাইলাতুল কদরে যেসব আমল করা যায়: নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, কবর জিয়ারত, জিকির-আজকার, আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, গরিবদের দান-সদকা, ইস্তেগফার, তওবা ইত্যাদি। পাশাপাশি এই দোয়াটির বেশ গুরুত্ব রয়েছে—اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি: ৩৫১৩)


শবে কদর পেতে হলে একটি আমলের বিকল্প নেই। সেটি হলো- মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করা। তাহলে হাদিস অনুযায়ী শবে কদরের ফজিলত লাভ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’(মুসলিম: ৬৫৬)


তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে- রমজানের শেষ দশকে জামাতে নামাজ মিস না করা। অন্তত এশা ও ফজর অবশ্যই জামাতে পড়া। তাহলে হাদিস অনুযায়ী, সারারাত নামাজের সওয়াব পাওয়া যাবে। আর সারারাত ইবাদত মানে শবে কদর পাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই।


তবে, যারা ইতেকাফ করছেন তারা নিশ্চিতভাবেই শবে কদর লাভ করবেন। ইতেকাফ অবস্থায় কেউ যদি রাতে ঘুমিয়েও থাকে, তবু তাকে ইবাদতকারীদের মধ্যে শামিল করা হবে। তখন শবেকদরের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতে ব্যয় করার ফজিলত অর্জন করবেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, في المعتكف هو يعكف الذنوب و يجري له من الحسنات كعامل الحسنات كلها  ‘সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সকল নেকী তার জন্য লেখা হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, বাবুস সাওম)


হাজার মাসের চেয়ে উত্তম অর্থ শুধু যে একহাজার মাসের চেয়ে উত্তম—এমন নয়, বরং অনেক বেশি বোঝাতেও হাজার শব্দটা ব্যবহার করা হয়। তারপরও আমরা যদি এখানে শুধু এক হাজার মাসই ধরি এর সময় দাঁড়ায় ৮৩ বছর ৪ মাস। তার মানে ৮৩ বছর ৪ মাস পর্যন্ত ইবাদত করার যে ফজিলত বা সওয়াব পাওয়া যায় তা এ এক রাতের ইবাদতের দ্বারাই মহান আল্লাহ প্রদান করে থাকেন।


তাই উম্মতকে শবে কদর তালাশ করতে বলেছেন নবীজি। যেন এই রাতের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে না হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমাদের সবাইকে ইতেকাফ নসিব করুন। আমিন।


No comments

Powered by Blogger.