জাকাতের টাকা মসজিদে দেওয়ার বিধান
জাকাত প্রদানের জন্য আল্লাহ কর্তৃক আটটি খাত রয়েছে। সেই খাতগুলোতেই জাকাতের অর্থ প্রদান করতে হবে। এর বাইরে কোনো খাতে দিলে তা সাধারণ দান হিসেবে বিবেচিত হবে, জাকাত আদায় হবে না।
যাদের ওপর জাকাত ওয়াজিব
ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হচ্ছে জাকাত। এটি ফরজ ইবাদত। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক এবং সম্পদশালী মুসলমান পুরুষ ও নারীর প্রতি বছর নিজের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করাকে জাকাত বলা হয়।
কেউ যদি এক বছর ধরে নেসাব পরিমাণ বর্ধনশীল সম্পত্তি অর্থাৎ ৭ তোলা বা ৮৭.৪৫ গ্রাম বা এর বেশি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা বা ৬১২.৩৫ গ্রাম রৌপ্যের মালিক থাকে অথবা ৮৭.৪৫ গ্রাম বা এর বেশি স্বর্ণের মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ তার কাছে থাকে, তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে সে সম্পদশালী ব্যক্তি গণ্য হয় এবং তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হয়।
নগদ অর্থ, স্বর্ণ/রৌপ্য বা ব্যবসায়ের সম্পদ যেদিন নেসাব পর্যায়ে পৌঁছে, সেদিন থেকেই জাকাতের বর্ষগণনা শুরু হয়। জাকাতের বর্ষ পূর্ণ হওয়ার দিনে ওই ব্যক্তির মালিকানায় যে পরিমাণ বর্ধনশীল সম্পদ অর্থাৎ নগদ অর্থ, ব্যবসায়ের সম্পদ, স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকে, তার ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ জাকাত হিসেবে দান করে দিতে হয়।
জাকাতের ৮টি খাত
জাকাতের খাতগুলো প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় জাকাত হচ্ছে অভাবগ্রস্ত, অভাবী এবং জাকাত (আদায়ের) কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য, যাদের মনকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করা আবশ্যক তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (সংগ্রামকারী) ও (বিপদগ্রস্ত) মুসাফিরের জন্য। এ হল আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত (ফরয বিধান)। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তওবা: ৬০)
এ আয়াত অনুযায়ী জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত আট শ্রেণির মানুষ হলেন-
১. ফকির; যার কিছুই নেই।
২. মিসকিন; যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই।
৩. জাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী।
৪. আর্থিক সংকটে থাকা নওমুসলিম।
৫. ক্রীতদাস। (মুক্ত হওয়ার জন্য)
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।
৭. আল্লাহর পথে জিহাদে রত ব্যক্তি।
৮. মুসাফির; স্বদেশে ধনী হলেও যিনি ভ্রমণকালে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
তাই বলা যায় যে, জাকাতের টাকা মসজিদের সাধারণ ফান্ডে দেওয়া যাবে না; যা মসজিদ নির্মাণ অথবা ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হবে। মসজিদ নির্মাণের কাজে বা মসজিদের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার কাজে ব্যয় করলে জাকাত আদায় হবে না। তবে কোনো মসজিদে যদি দরিদ্রদের সহায়তায় আলাদা জাকাত ফান্ড থাকে, সেক্ষেত্রে ওই ফান্ডে জাকাতের টাকা প্রদান করা যাবে।
No comments