Adsterra

কী কারণে আপনার প্রেম হয় না ?

কী কারণে আপনার প্রেম হয় না, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

আমাদের দেশে, সমাজে বেশ কিছু ‘ইয়ে’ আছে। সেসব কারণে আমাদের সঙ্গী হয় না। ‘ইয়ে’ মানে হচ্ছে ট্যাবু। এটি হল একটি অন্তর্নিহিত নিষেধ বা ধর্মীয় সামাজিক বেড়াজাল যা অতিক্রম বা কোনো কিছুর বিরুদ্ধে নিরুৎসাহিত সাংস্কৃতিক অনুভূতি। যা খুবই বিপদজনক বা বীভৎস, সম্ভবত সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত পবিত্র বা অপবিত্র। আরও পরিষ্কার করে যদি বলতে হয় সংস্কার। এরচেয়ে পরিষ্কার করা যাবে না বরং উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, বিয়ের আগে পুরুষ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করা ঠিক নয়–এ ধরনের নিয়ম কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়। এটা ২০২৫ সাল। এখন বেশিরভাগ মানুষই এসব মানেন না। এভাবে ছাড়া ছাড়া কথা না বলে একবারে বলে ফেলাই ভালো। কী কারণে আপনার প্রেম হয় না বা আপনি এখনো একা :


বেড়ে ওঠার ধরন

মনস্তত্ত্ববিদ জন বৌলবি এবং ম্যারি এইনসওর্থের অ্যাটাচমেন্ট তত্ত্ব অনুসারে, জীবনের শুরুতে আপনি কীভাবে বেড়ে উঠেছেন, তার ওপর নির্ভর করে আপনার পরবর্তী ও বাকিটা জীবন। যারা অতিরিক্ত জড়িয়ে যান বা একেবারে এড়িয়ে চলা পরিবেশে বড় হয়েছেন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে গিয়ে তারা সমস্যায় পড়েন। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন, প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে কেউ একটি সম্পর্কে অতিরিক্ত অনুগত হয়ে পড়েন আবার কেউ একটু এড়িয়ে চলেন বা দূরে ঠেলে দিতে পারলে বাঁচেন! তারা কারো সঙ্গে মন খুলে মিশতে পারেন না। ফলে সম্ভাব্য সঙ্গীদের থেকে দূরে সরে যান। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিরাপদ অ্যাটাচমেন্ট মেনে চলেন, তাদের সম্পর্কগুলো হয় স্বাস্থ্যকর এবং স্থিতিশীল। 


আত্মসম্মানবোধ

আপনি কি নিজেকে বেশি গুরুত্ব দেন? এটা কিন্তু সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিজেকে বেশি গুরুত্ব দিলে আপনার সঙ্গে কে প্রেম করবে? তবে আপনার আত্মসম্মান থাকতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিজেদের মূল্যায়নে ভারসাম্য রাখতে পারেন এবং যাদের আত্মসম্মান বোধ আছে, তারাই স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং ধরে রাখতে বেশি সক্ষম। উদাহরণ- যার আত্মসম্মান বোধ আছে, সে সঙ্গীর আত্মসম্মানে আঘাত করে না।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

আবেগপ্রসূত ঝুঁকি নেওয়ার ভয়

আবেগপ্রসূত ঝুঁকি নেওয়ার ভয় মানুষের গভীর সম্পর্কের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক মানুষ অতীতের আঘাত, প্রত্যাখ্যান বা বিশ্বাসের অভাবের কারণে আবেগিক দিক দিয়ে খোলামেলা হতে ভয় পায়। আবেগপ্রসূত ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করা ব্রেনে ব্রাউন বলেছেন, ‘মানুষ অনেক সময় গভীর সম্পর্ক গড়তে নিরুৎসাহিত হয়। কারণ তারা আবেগাত্মক আঘাতের ভয়ে থাকেন। আবেগগত ঝুঁকি নেওয়া সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 


সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক প্রভাব

সাংস্কৃতিক নীতিমালা, পরিবারিক প্রত্যাশা এবং সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কের গতিবিধির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো কোনো সমাজে ভালো সঙ্গী বা উপযুক্ত মানুষ হওয়ার ধারণা কঠোর হতে পারে, যা ব্যক্তিগত পছন্দ বা স্বাধীনতাকে সীমিত করে ফেলে। এ ছাড়া আধুনিক সমাজের প্রবণতাগুলো, যেমন স্বতন্ত্রতা এবং ব্যস্ত জীবনযাপন সঙ্গী খুঁজে পেতে বা সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।


অতীতের আঘাত বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতা

যারা সম্পর্কজনিত আঘাত (যেমন- শৈশবের নির্যাতন, ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক বা বিশ্বাসভঙ্গ) পেয়েছেন, তারা অন্যদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন না। যারা আবেগগত, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন, ভবিষ্যতের সম্পর্কের মধ্যে তারা ওই অভিজ্ঞতাগুলোকে টেনে নিয়ে আসেন, যা নিরাপদ এবং প্রেমের বন্ধন গড়ে তুলতে বাধা দেয়। এই মানুষগুলো নিজেকে ধ্বংস করার মতো আচরণ করতে পারেন বা প্রেমের সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে পারেন। 


সামাজিক একাকিত্ব 

কিছু মানুষ শুধু সামাজিক একাকিত্ব বা মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগের অভাবে উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজে পান না। এটি এমন পরিস্থিতিতে ঘটে, ধরা যাক, কেউ একজন এমন দূরের গ্রামে থাকেন যে, সেখানে বসে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকে না বললেই চলে। কারো আবার ব্যস্ততা এত বেশি যে, সামাজিক মেলামেশার সময়-সুযোগও নেই। কারোবা থাকে সোশাল অ্যাংজাইটি, যা তাকে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া থেকে দূরে রাখে। অনলাইন ডেটিংও এক অস্থির জায়গা, যেখানে মানুষ অনেকগুলো অপশন দেখে ক্লান্ত বা হতাশ হয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শক্তিশালী সামাজিক নেটওয়ার্ক এবং তাদের পছন্দের কার্যকলাপে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন, তারা সহজে উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজে পান।


ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য

ব্যক্তিত্ব মনস্তত্ত্ব  খোলামেলা, বহির্গামী এবং সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের সন্তুষ্টি এবং সফলতার সাথে সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্যগুলোতে যারা এগিয়ে থাকেন, তারা সাধারণত অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে এবং সম্পর্ক গড়ে তুলতে বেশি সক্ষম হন। উদাহরণস্বরূপ, যারা বহির্গামী তারা নতুন মানুষের সঙ্গে বেশি বেশি পরিচিত হতে পারেন, আর যারা খুব সৌহার্দপূর্ণ তারা সহজেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। 


মানসিক এবং আবেগগত ভুল বোঝাবুঝি

ব্যর্থ যোগাযোগ বা ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনেক সময় মানুষ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, আবেগ বুঝতে, প্রকাশ করতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারা সম্পর্কের সফলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা সহানুভূতি বা আবেগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বল, তারা অন্যদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন না। পারলেও ভুল বোঝাবুঝি, অপূরণীয় প্রত্যাশা এবং ব্যর্থ যোগাযোগের কারণে সম্পর্ক ভেঙে যায়।


অবাস্তব প্রত্যাশা

কিছু মানুষ ‘ভালো সঙ্গী’ বা ‘আদর্শ সম্পর্ক’ কী হবে তা নিয়ে মনে অবাস্তব প্রত্যাশা পুষে রাখেন। অবাস্তব সেই মানদণ্ড যেমন শারীরিক চেহারা, আর্থিক সফলতা বা সামাজিক অবস্থান নিয়ে তার ভাবনার কারণে তার প্রেম হয় না। প্রচলিত একটি রসিকতা আছে, অনেক মেয়েই চায় তার সঙ্গী বংশগতভাবে হবেন অমিতাভ বচ্চনের মতো, বিত্তের দিক থেকে হবেন ইলন মাস্ক, স্টাইলের দিক থেকে হবেন শাহরুখ খানের মতো এবং বয়স হতে হবে ২৭ বছর। হবে না, সম্পর্ক তার কখনোই হবে না। কারণ তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া ছবি-ভিডিওর সঙ্গে তুলনা করে সঙ্গী খুঁজে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। তার পক্ষে সন্তুষ্ট হওয়া কঠিন। 

 

ভালো সঙ্গী বা প্রেমিক খুঁজে পাওয়া 

ভালো সঙ্গী বা প্রেমিক খুঁজে পাওয়া অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। তবে ওপরের দুর্বলতাগুলো যদি সামাল দেওয়া যায়, তাহলে সঙ্গী পাওয়া একটু সহজ হবে। আর ওসব যদি কারো থাকেও, থেরাপি, কাউন্সিলিং, স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের অভ্যাসের মাধ্যমে নিজেকে বদলে ফেলুন। পরের ফাগুন আসার আগেই আপনি দ্বিগুণ... না দুজন হয়ে যাবেন।

No comments

Powered by Blogger.