Adsterra

জেন-জি, বিভ্রান্তিকর নাকি পরিবর্তনশীল প্রজন্ম ?

                               জেন-জি, বিভ্রান্তিকর নাকি পরিবর্তনশীল প্রজন্ম, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

জেন-জি, যাদের জন্ম ১৯৯৭ সালের পরে, একটি খুবই বিপরীতমুখী প্রজন্ম। তারা একদিকে পূরনো নিয়ম ভাঙে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি কথা বলে এবং পরিবর্তন চায়। কিন্তু অন্যদিকে উদ্বেগ, পরিচয় সংকট এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপেও ভোগে।

ডিজিটাল বিপ্লব, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও সমাজের পরিবর্তিত মূল্যবোধের মধ্যে বেড়ে ওঠা জেন-জি, কখনোই কোনো নির্দিষ্ট ঘরানায় পুরোপুরি খাপ খায় না। তারা একদিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সারা বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত, আবার সামাজিকভাবে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তারা স্বাধীনচেতা, কিন্তু একইসঙ্গে ভীষণ অনিশ্চয়তার শিকার। এ যেন, একেবারে বিপরীত বৈশিষ্ট্যের এক যুগলবন্দি।


পূর্ববর্তী প্রজন্মের থেকে আলাদা কেন ?

জেন-জি’র অভিভাবকরা মূলত জেন-এক্স ও মিলেনিয়ালস। যাদের বেড়ে ওঠার সময়কার সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি স্থিতিশীল ছিল। মিলেনিয়ালস প্রজন্ম এমন এক সময় বড় হয়েছে, যখন পুরো বিশ্ব যেন অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ২৪/৭ সংবাদ চ্যানেল, সন্ত্রাসবাদ, স্কুলে বন্দুক হামলা এবং আর্থিক মন্দার মতো ঘটনা পিতামাতাদের আরও বেশি রক্ষণশীল করে তুলেছিল। ফলে মিলেনিয়ালরা একটা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে বড় হয়েছে।

কিন্তু জেন-জিদের জন্য সেই নিরাপত্তার চাদর ছিল না। তারা ছোট থেকেই জেনেছে, বিশ্ব জলবায়ু সংকটে আছে, রাজনীতি অস্থিতিশীল, আর্থিক সংকট যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারে। এই অবিশ্বাস্য কঠিন বাস্তবতায় তাদের মানসিকতা গড়ে উঠেছে—একদিকে দৃঢ়চেতা, অন্যদিকে প্রবল উদ্বেগগ্রস্ত।


তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বেড়ে ওঠা এক ভিন্ন প্রজন্ম

মিলেনিয়ালরা ইন্টারনেটের আগমন দেখেছে। কিন্তু জেন-জি কখনোই এমন এক পৃথিবী দেখেনি যেখানে ইন্টারনেট ছিল না। স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়া তাদের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছে, যা মিলেনিয়ালদের ক্ষেত্রেও এতটা ছিল না। তথ্যপ্রযুক্তির এই বিপ্লব একদিকে যেমন তাদের দিয়েছে অগণিত জানার সুযোগ। সেই সঙ্গে এনেছে অসীম তথ্য ভান্ডার, অতিরিক্ত প্রতিযোগিতা আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভয় ও সন্দেহ। তারা প্রতিদিন অসংখ্য অপশন সামনে পায়। কিন্তু এত বিকল্পের মধ্য থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তাদের জন্য বেশ মানসিক চাপ হয়ে দাড়িয়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যপারে তারাই সবচেয়ে বেশি সরব। অথচ নিজেরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। জেন-জি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলাখুলি কথা বলে। কিন্তু তারা নিজেরাই সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপে ভোগে। তাদের রয়েছে শিক্ষার চাপ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অবাস্তব প্রত্যাশা।

এগুলো তাদের উদ্বেগ ও হতাশা বাড়িয়ে তুলেছে। পুরনো প্রজন্মের মতো ‘সব কিছু সহ্য করে নাও’ এই ভাবনাকে লালন করে না তারা। উল্টো নিজের আবেগ-অনুভূতিকে গুরুত্ব দেয়। এই খোলামেলা মনোভাব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা সহজ করেছে। তবে এর ফলে অনেকে নিজেদের আবেগের চাপে হতাশ হয়ে পড়ছে।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

স্বাধীনতা বনাম নিরাপত্তার লড়াই

জেন-জি স্বাবলম্বী হতে চায়। কিন্তু তারা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাবে ভুগছে। তারা পারিবারিক চাকরির ধরন বদলাতে চায়। ফ্লেক্সিবিলিটি চায়। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট ও চাকরির অনিশ্চয়তা তাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সমাজের নিয়ম নতুন করে লেখার চেষ্টা

জেন-জি লিঙ্গ পরিচয় থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রের নিয়ম পর্যন্ত সবকিছু বদলাতে চায়। তারা পুরনো নিয়ম নীতির ধার ধারে না। তৈরি করতে চায় নতুন নিয়ম। তাই তারা পরিবর্তনকে গ্রহণ করে স্বাদরে। তবে তাদের এই মানসিকতা পুরনো প্রজন্মের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করছে। কারণ অনেকের কাছে জেন-জিদের চিন্তাধারা অসংলগ্ন বা পরস্পরবিরোধী মনে হয়।


তাহলে জেন-জি সবচেয়ে বিভ্রান্ত প্রজন্ম ?

না, তারা বিভ্রান্ত নয়। তারা সর্বাধিক পরিবর্তনশীল প্রজন্ম। তাদের আচরণ বুঝতে হলে পুরনো প্রজন্মের তুলনার বাইরে এসে সময়ের গতি অনুযায়ী নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। জেন-জি বৈপরীত্য আসলে সমাজের দ্রুত পরিবর্তনের স্বাভাবিক প্রতিচ্ছবি। তারা শুধুমাত্র নতুন নিয়ম মানছে না। তারা নতুন সমাজ তৈরির পথেও হাঁটছে।



No comments

Powered by Blogger.