Adsterra

ঢাবির নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সভাপতির কুকীর্তি নিয়ে সাবেক নেতার পোস্ট ভাইরাল

ঢাবির নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সভাপতির কুকীর্তি নিয়ে সাবেক নেতার পোস্ট ভাইরাল, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজাহারুল কবির শয়নের বেশকিছু অন্যায় অত্যাচারের পর্দা খুলে দিয়েছেন নকিবুল ইসলাম সুমন নামে দলটির সাবেক নেতা ও ঠিকাদার।


গত শনিবার (১৫ মার্চ) তিনি এক ফেসবুক পোস্টে ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে করা ছাত্রলীগ নেতা শয়নের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।

নিচে তার লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো…


‘লিখাটা একটু বড় বাট পড়ে দেখতে পারেন..


মাজাহারুল কবির শয়ন, ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি।

আমি যে গ্রুপে রাজনীতি করতাম সে গ্রুপের একজন সদস্য ছিল, ছিল হলের সাংগঠনিক সম্পাদক, ভালো স্লোগান ধরতো। হলে আমরা একই ব্লকে পাশাপাশি থাকতাম। ওর চলাফেরা, আচার আচরণ দেখে আমার সবসময় মনে হয়েছে ও প্রচণ্ড অলস টাইপের মানুষ। ক্যাম্পাসের কিছু সিনিয়র এবং বহিরাগত কিছু লোকজনের সাথে ওর উঠাবসা ছিল এবং সেটা সম্ভবত নেশাদ্রব্যদি গ্রহণ করার কারণে।


২০১৪ পরবর্তী রাজনীতিতে শয়নের বিশাল একটা ছন্দপতন ছিল, এটা ওর অলসতার কারণে। সোহাগ-নাজমুল কমিটির পরে যখন সোহাগ-জাকির কমিটি হয় এবং রাজনীতির মাঠে যে চিরাচরিত দৌড়াদৌড়ি, প্রোগ্রাম মিছিল-মিটিং, মধুর ক্যান্টিন, পার্টি অফিস, নেতার বাসায় গিয়ে নেতাকে নিজের ফেসটা চেনানো, কনভিন্স করা এইগুলো থেকে অনেকদূরে ছিল। যে কারণে পরবর্তীতে রাজনীতি আর কোন ভালো পদ পায়নি একসেপ্ট ঢাবি সভাপতি। শয়ন যেহেতু ২০১৫ সালে থার্ড ইয়ার/ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট, আর সোহাগ-জাকির যেহেতু আগে থেকে চিনে না সেহেতু প্রত্যাশিত পদ পাবে না এটা স্বাভাবিক। শয়নের প্রত্যাশিত ভালো পদ না পাওয়ার আরেকটা বড় কারণ ছিল আমাদের হল নেতা আরেফিন সিদ্দিন সুজন ভাইয়ের রাজনৈতিক স্টাইল ও দর্শন। সুজন ভাইয়ের সাথে সোহাগ ভাই কিংবা তৎকালীন আবিদ আল হাসান ভাইয়ের সাথে মোটেও ভালো সম্পর্ক ছিল না। যেহেতু ও নিজে কারো পিছনে প্রোগ্রাম মিছিল মিটিং করে সম্পর্ক ডেভেলপ করে নাই, আবার ওর সিভি যখন সুজন ভাই ক্যারি করবে স্বাভাবিকভাবে ভালো পদ আসার কথা না। তারপরেও যতদূর শুনেছি ওর নাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটিতে সাংগঠনিক/সম্পাদক পদে ছিল কিন্তু সেখানে নাকি বাদ-সাধে আবিদ আল হাসান। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে সদস্য পদ পায়। 

পরবর্তীতে রাজনীতি করবে না এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অব্যাহতি নেয়৷ এরপর শোভন-রাব্বানী কিংবা কার্যকরী কমিটির জয়-লেখক হবার পরেও ওর রাজনীতিতে কোন তোরজোর ছিল না। কিন্তু সুযোগ পেয়ে ওর ক্লজ ফ্রেন্ড দ্যা ডাকসু ম্যান খ্যাত সাদ্দাম হোসাইন ওকে দিয়ে ডাকসুতে সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচন করায় এবং ম্যাকানিজম করে জিতেয় নিয়ে আসে।

ধারণা করা হয় মুজিব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর (কুমিল্লা) সুপারিশ ও সাদ্দাম হোসাইনের (সব থেকে ক্লজ বন্ধু) সহযোগিতায় শয়ন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি হয়। একটা টোটালি ইনএক্টিভ ছেলেকে ঢা.বি শাখার মত একটা গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সভাপতি কেন বানিয়েছিল আজ অবধি আমার মাথায় ধরে না। পার্টিতে কি আর কোন যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলেমেয়ে ছিল না?

নেতা হবার পরে শয়ন-সৈকতের ভাবটা এমন ছিল বিশেষ করে শয়নের আমরা কেন ওর কাছে গিয়ে সালাম দেই না। অথচ সাদ্দাম-ইনান দূর থেকে দেখলেও কাছে এসে সিনিয়রদের সালাম দিয়ে দুইটা কথা হলেও বলে যাইতো।

যাইহোক, সভাপতি হবার পরে দুই তিনটা ঘটনা নিয়ে একটু আলাপ করি-


না অন্য কারো সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা শুনে লিখছি না, আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে ঘটে যাওয়া ৩-৪ ঘটনা বলবো, যদিও সেম ঘটনা অনেকের সাথেই ঘটেছে।


রেজিস্ট্রার বিল্ডিং কেন্দ্রিক মূলত সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই কাজবাজ করতেন, কেউ এক্সপেরিয়েন্সের জন্যে করতেন, কেউ বা আবার ঢাকার শহরে টিকে থাকার লড়াইয়ে। আমি মেডিকেল সেক্টরে টুকটাক কাজবাজ করতাম সে সুবাদে করোনা পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে একটা কাজ নেই, সেখান থেকে শুরু পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটিতে বেশ কিছু কাজবাজ করেছি। সঞ্জিত-সাদ্দাম যখন ঢাবি শাখার প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি ওরা কোনদিন আমাকে বা আমাদের সাবেক সিনিয়র বড় ভাইদের কল দিয়ে ডিস্টার্ব করেছে এটা আমি অন্তত পক্ষে শুনি নাই। তবে এটা জানতাম সাদ্দাম ঠিকাদার সমিতির একটা কমিটি করে দিয়েছিল কাউছার ভাই সভাপতি (সাবেক ছাত্রলীগের নেতা) এবং শাহেদ ভাই (সেক্রেটারি) এরা কিছু কিছু কাজে ৩% করে টাকা নিয়ে সাদ্দামকে দিত৷ যেহেতু আমি সিভিল কাজ করি নাই সেহেতু আমাকে এই স্লপে পরতে হয়নি। শাহেদ ভাই আমাকে এক দুইবার বলেছে বাট পরবর্তীতে দেওয়া লাগে নাই।


ওদের প্রসঙ্গটা টানার উদ্দেশ্যে হল, শয়ন-সৈকতের সাথে পার্থক্যটা বুঝানোর জন্যে। 


১. শয়ন-সৈকত নেতা হবার কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় কনভোকেশনের স্যুভেনির সাপ্লাই দেওয়ার ৮৪ লাখ টাকার একটা কাজ পাই, অবশ্য এই কাজটা পেয়েছিলাম মূলত বিগত বছরের কনভোকেশনে ভালো কাজ করার এওয়ার্ড স্বরূপ ট্রেজারার স্যার, রেজিস্ট্রার, ডিপিডি, ডিএ সবাই আমাকে বেশ সাপোর্ট দিয়েছে। কাজটার সব প্রসেসিং শেষ হইতে হইতে প্রায় ১৫/২০ দিন সময় লাগে। এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার একটা প্যাঁচ লাগায় সে একজনকে কাজ দিবে বলে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছিল (সে রেকর্ডও আমার কাছে আছে) কিন্তু তাকে এই কাজ দিতে না পারায় ইঞ্জিনিয়ার ঐ ঠিকাদারকে শয়নের কাছে পাঠায়, এরপর শয়ন কল দিয়ে আমাকে একদিন একটু দেখা কর‍তে বলে। তখনও আমি জানি না কি কারণে। আবার দুদিন পরে কল দিয়ে বলে ভাই দেখা তো করলেন না, আমি হলে আছি আপনি একটু আমার রুমে আসেন। তখন অবশ্য আমি রেজিস্ট্রার বিল্ডিংই ছিলাম। ওরে বললাম রুমে যাবো না, তুই গেস্ট রুমে আয় আমি আসতেছি। বলে না ভাই ঐখানে কথা বলা যাবে না আপনি রুমেই আসেন। পরে গেলাম রুমে তখন মে বি ১২.৩০ মত বাজে। গিয়ে একটু অবাকই হইছি পুরো রুম সোডার বোতলে ভরা, তিন চারটা খালি মদের বোতল পরে আছে। দেখি ঘুম থেকে উঠে এখনো বিছানা ছাড়ে নাই। ঐ সময় রুমে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সম্পাদক বসা ছিল (ময়মনসিংহ বাড়ি), আমাকে দেখে পরে ঐ ভাই চলেও গেছে। দেখলাম একটা টি টেবিলে ৭/৮ পদের ফল কাটা, স্টার থেকে নাস্তা আসছে৷ যাওয়ার পরে বললো আপনি একটু বসেন আমি একটু গোসল দিয়ে আসি। বললাম গোসলের পরেই আসতে বলতে পারতি। বলে ৫/৭ মিনিট লাগবে। 



ও গোসলে যাওয়ার পরে খেয়াল করলাম একটা ছেলে ওর জুতা সাইনিং করতেছে। আমি এমনিতে জিজ্ঞেস করলাম ক্যান্টিনে না দোকানে কাজ করো? দেখি ছেলে কোন উত্তর দিচ্ছে না। সেকেন্ড টাইম জিজ্ঞেস করার পরে বলে ভাই আমি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। তুমি হলের স্টুডেন্ট? বলে হ্যাঁ ভাই। বললাম তোমাকে জুতা পরিষ্কার করতে বলছে কে? দেখি কথার আর উত্তর দিচ্ছে না। পরে একটু ধমকের সুরেই বললাম এটা তোমার কাজ? এইগুলো করবে মুচি অথবা ক্যান্টিনের ছেলেরা। তুমি আমাদের মতই একজন স্টুডেন্ট ফারদার এসব কাজ কেউ করতে বললেও করবা না, মুখের উপর না বলে দিবা। পরে ছেলেটা দেখলাম বেশ লজ্জা পেয়ে চলে গেলো। 


শয়ন এসে প্রথমে একটু ফাপর ভাই আপনি তো কনভোকেশনের এই কাজ পাবেন না। আমি অলরেডি ট্রেজারার, প্রো-ভিসি সামাদ স্যারের সাথে কথা বলছি। তারা দাদা মেটালকে (আরেকটা কোম্পানি) কাজ দিবে কারণ তারা ফার্স্ট লোয়েস্ট (দাদা মেটাল বছর দুয়েক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্ল্যাক লিস্টেড ছিল, গোল্ড মেডেলে স্বর্ণের পরিমাণ কম থাকায়)। বললো এটা সাংবাদিকরাও জানে আমি বললে নিউজ করবে, মানে আমাকে ভয় দেখানো। বললাম এটা সমাধান হয়ে গেছে আমাকে দুই একদিনের মধ্যে নোয়াও দিবে। জিজ্ঞেস করলাম তুই কি আমাকে এটার জন্যে ডেকেছিস নাকি অন্য কোন কাজে? বলে না আপাতত এটাই। বললাম আচ্ছা কাজ উঠুক দেন তোর আর সৈকতের বিষয়টা দেখবোনে। আর তোরা তো টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাথেও জড়িত ছিলি না, একাজ আমি অলমোস্ট ১০% লেসে নিছি। বলে এভাবে বললে হবে না, কত দিবেন ক্লিয়ার করেন, না হলে কাজ আপনি পাবেন না। বললাম দেখ আমি তো তোদের হিসাব করে টেন্ডার করি নাই। তবে তোরা অখুশি হবি না সে ব্যবস্থা আমি করবো। বলে ভাই আপনার কাজ করার ইচ্ছে নাই, চলেন বের হই। বললাম তোকে রাতে হিসাব করে জানাবোনে তোদের জন্যে কি করতে পারি। তখন এমন কিছু কথা বললো যেটা শুনে বেক্কল হওয়ার মত উপক্রম। বলে ভাই শুনেন নেতা হইছি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কনসার্নের বাইরে একটা টাকার কাজও হবে না, কেন্দ্রের ওরা ১০০ কোটির মালিক হইলে আমাদেরও ৮০% হইতে হবে। আমি আচ্ছা বলে ঐদিন চলে আসছি। রাতের বেলা ওর বন্ধু মেসবাহ কল দিয়ে বললো প্রেসিডেন্ট জানতে চাইছে আপনারা কত দিবেন? বললাম দুইজনকে ১, ১ দুই লাখ দিতে পারবো সর্বোচ্চ। মেসবাহ বললো কথা বলে জানাচ্ছি। মেসবাহ বললো ভাই তারা দুইজনে ১২ লাখ টাকা চাইছে। আমি এদের ডিমান্ড দেখে আকাশ থেকে পরার মত অবস্থা। ৮৪ লাখ টাকার কাজ তাও আবার এই কাজে ভ্যাট ১৫% এবং- এআইটি ৫% টোটাল ২০% ছিল। বললাম তোর প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিকে বল আমাকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে দিতে ওরা কাজটা করে ফেলুক।


এর পরেরদিন ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শে দাদা মেটালকে দিয়ে ওরা একটা চিঠি দেওয়ায় প্রো-ভিসি সামাদ স্যারকে। আমি এটা জানতে পেরে ট্রেজারার স্যারকে জানাইলাম। স্যার আমাকে বললো তুমি চুপচাপ থাকো কাজ আমরা সবায় মিলে দিয়েছি, তুমিই পাইবা। যখন ওরা সুবিধা করতে পারতেছিলো না তখন আমাকে আবার মিসবাহকে দিয়ে ৮/৬ লাখ এভাবে বারগেনিং করার চেষ্টা করতেছিলো আমি বললাম ঠিক আছে যা তোরা ছোট ভাই আরেক লাখ বাড়ায় দিবোনে। পরে যেদিন টাকা দিতে গেছি সেদিন দিদার ভাইয়ের সাথে দেখা সেও সম্ভবত একটা টাকা দিবে, বললো চল আমারও কাজ আছে ওদের সাথে। দিদার ভাই আর আমি কেন একসাথে গেলাম এটা তাদের ব্যাপক মাইন্ডে লাগছে। যাই হোক ৫/৪ লাখের নিচে নিবে না, বললাম আমি একজনের থেকে ইনভেস্ট নিয়ে কাজ করছি আমার নিজের পকেটেই তো তিন লাখ ঢুকে নাই অথচ তোদেরকে ৩ লাখ দিয়ে গেলাম। পরে দিদার ভাইয়ের রিকুয়েষ্ট টাকাটা নিলো। শুরু দিন বলছিলো নিউজ করাবে ঠিকি গাজাখুরি কিছু তথ্য দিয়ে নিউজ একটা করাইছিলো আমার বিরুদ্ধে। ট্রেজারার স্যার এবং রেজিস্ট্রার দুইজনকে জানায়ে বললাম স্যার নিউজের প্রতিবাদ করে আমি একটা মানহানির মামলা করবো। স্যার আমাকে একটা ধমক দিয়ে বললো আমি সব জানি তোমার কিছুই করতে হবে না, চুপচাপ থাকো৷  

তখন থেকে শুরু হইলো ওদের উৎপাত। শয়নের পক্ষ থেকে ওর একটা ফ্রেন্ড মেসবাহ (সূর্যসেন হল), আর সৈকতের দিক থেকে বায়েজিদ নামক (জহু হল) একটা ছেলে সারাক্ষণ রেজিস্ট্রার বিল্ডিং পরে থাকতো আর কোথায় কোন টেন্ডার হলে সেটা নিয়ে  বাগড়া দেওয়াই ছিল ওদের কাজ। 


২. রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে কয়েকটা সিনিয়র বড় ভাই ছিল যারা মূলত বছরে ৫/৭ টা কাজ করে ঢাকায় ফ্যামিলি নিয়ে সার্ভাইব করতো। একদিন এক বড় ভাই আমার হাত ধরে কান্না করে দিছে সে ১,৩০,০০০ টাকার একটা কাজ করছে, ওরা ২০ হাজার টাকা চায়। বললো আগে ৫ লাখ টাকার নিচে হইলে কেউ টাকা চাইতো না। আর এরা ৫০ হাজার টাকার কাজেও ভাগ চায়। বললাম কি আর করবেন ঠিকাদার সমিতির সভাপতি সেক্রেটারিকে জানায়ে ৫/১০ হাজারের মধ্যে সমাধান করার চেষ্টা করেন। বললো কারো কথা শুনে না, না দিলে আমাকে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং আসা নিষেধ করে দিছে।


৩. আরেকদিন এক হলের সাবেক সেক্রেটারি বড় ভাইও খুব আক্ষেপ করে বললো সুমন আমার বাচ্চার দুধ কিনতে যাচ্ছিলাম এই সময় ওদের এক পাইটু কল দিয়ে বললো এখন ১০ হাজার টাকা বুকিং মানি পাঠান না হলে কাজ আরেকজন পাবে। আমি টাকাটা দিলাম পরে শুনি ইঞ্জিনিয়ারকে প্রেসার দিয়ে কাজ আরেকজনকে দিয়ে দিছে। সে টাকাটাও আমাকে আর ফেরত দেয় নাই অন্য কোন কাজও দেয় নাই।


৪. ঢাবি প্রেসে একটা মেশিন নিবে এটার যখন বাজেট পাশ হয় (শয়ন-সৈকত নেতা হবারও প্রায় বছরখানেক আগে)  তখন থেকে আমি জানতাম এবং এই অনুযায়ী ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক কাজও করেছি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে স্পেক্ট কালেক্ট করা, ডিপার্টমেন্টকে তথ্য দিয়ে হেল্প করা, ফাইনালি জাপানের একটা কোম্পানি থেকে স্পেক্ট নেওয়া, অথোরাইজেশন নেওয়া। যখন টেন্ডার হইলো তখন শয়ন-সৈকতের পাইটু দুইটাকে দিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করানো শুরু করলো। পরে জানতে পারলাম আমাদের ছাড়া আর কাউকে পাচ্ছে না টেন্ডারে অংশগ্রহণ করাইতে। সৈকত একদিন কল দিয়ে বললো ভাই একটু মধুর ক্যান্টিনে বসতে চাচ্ছিলাম প্রেসের কাজটা নিয়ে চিন্তা করলাম ওরা ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসনের যেভাবে প্রেসারে রেখে কাজটাজ করায় পরে আবার একটা ঝামেলা পাকাবে, এ কারণে ভাবলাম নেগোসিয়েশন করে কাজটা করি।


সৈকত বললো ভাই কত দিবেন বলেন? বললাম তোরাই বল, দরকার হয় শয়নের সাথে আলাপ করে বল, পরে ঝামেলা করতে পারবি না। বললো সমস্যা নাই আমার সাথে বললেই হবে। বললাম তাহলে কত চাস বলে ফেল? (১ কোটি ৭০ লাখ টাকার টেন্ডার)। বলে আমার অভিজ্ঞতা নাই আপনি বলেন, বললাম দুইজনকে ১০ লাখ টাকা দিবো এর বেশি চাইলে আমি কাজ করবো না অথবা নিজের মত করে করবো যেহেতু টেন্ডার গোছানো আমার। 

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

বলে ঠিক আছে তাহলে করেন আমি শয়ন ভাইকে বলবোনে। পরেরদিন মেসবাহ কল দিয়ে বললো ভাই কাজ আপনিই করবেন তবে অন্য কেউ শিডিউল নিলে আমাদের জানায়েন। পরে জানতে পারলাম আব্দুল মোনায়েমের মেয়ের কোম্পানি মেডিওগ্রাফ একটা সিডিউল নিয়েছে। ওদের জানানোর পরে নাম্বার কালেক্ট করে দিতে বললো, আমার কাছে আগে থেকে নাম্বার ছিল। সে নাম্বার নিয়ে ওরা মেডিওগ্রাফের সাথে নেগোসিয়েশন করে ফেলছে, মানে আমার থেকে নাম্বার নিয়েই! টেন্ডার সাবমিশানের আগের দিন রাতে বলতেছে ভাই টাকা দিবেন ২০ লাখ না হলে আপনি টেন্ডার কইরেন না। আকাশ থেকে পড়লাম। পরে আমার পার্টনার সে বললো শেষ মুহূর্তে এসে টেন্ডার না করলে কেমনে কি, বেশ কিছু টাকাতো খরচ হয়ে গেছে। আমি নিষেধ করার পরেও আমার পার্টনার ওদেরকে ১৫ লাখ দিতে চাইছে কিন্তু এরা তাতেও রাজী না। যাই হোক আমরা পরে ওদের সাথে কথা না বলে টেন্ডার সাবমিট করলাম এবং লোয়েস্টও হইলাম। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ছিল তিনজন এর মধ্যে মেডিওগ্রাফের দুইটা লাইসেন্স। আমাদের কাগজপত্রের হার্ডকপি জমা দিতে দিবে না। যদি জমা দেই তাহলে নাকি আমাদের অবস্থা এফ.রহমান হলের রুহুল ভাইয়ের মত করবে। আমার পার্টনারকে বিভিন্নভাবে থ্রেড করা শুরু করলো। তারপরও একপ্রকার জোর করে জমা দিলাম। পরে শুনি আমাদের নাকি কাগজপত্রে শর্ট। অথচ এই কাজের সকল কাগজপত্র মাস খানেক আগে থেকেই গুছিয়ে রেখেছিলাম। ধারণা করছি হয়ত আমাদের কোন কাগজ সরিয়ে ফেলছে। মেডিওগ্রাফের যে বড় ভাই পরিচিত তার থেকে শুনলাম ওদের সাথে ডিল হয়েছে, শুরুতে ৮ লাখ আর পরে হয়ত আর অল্প কিছু টাকা দিবে। অথচ আমরা ১৫ দিতে চাইছি আমাদেরকে কাজ করতে দিবে না।


৫. একবার মেডিকেল সেন্টারের একটা নিলামে কেউ শিডিউল নিচ্ছিল না তখন মেডিকেল সেন্টারের অফিসার হুমায়ুন, ফিরোজ ভাইয়ের রিকোয়েস্টে আমার পার্টনার আমাকে না জানিয়ে একটা শিডিউল কিনেছিল তাও টেন্ডারের পরে তারা মাল বিক্রি করে দিবে এই আশ্বাসে। টেন্ডারেএ বেইজড প্রাইজ ছিল মে বি দেড় লাখ টাকা। অফিস থেকে বলে দিছিলো আপনারা ২ লাখ টাকার মত কোট করলে ৪০/৫০ হাজার টাকার মত লাভে মাল বিক্রি করে দিতে পারবো। আমরা শিডিউল নিছি এটা জানতে পেরে মেসবাহ এবং বায়েজিদকে দিয়ে কল দেওয়াইছে তাদেরকে দুই লাখ টাকা দিতে হবে অন্যথায় নিলামে অংশ নেওয়া যাবে না। এটা শুনে আমি হেসে দিছি। বললাম তোরা কর গিয়া নিলাম, আমি করলে তোদের হাত খরচ সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দিতে পারবো। একটু পরপর কল দিয়ে ভাই দেড় দিয়েন, এক দিয়েন। পরে আর সে নিলাম করিই নাই, সেটা পরবর্তীতে দুইবার রি-টেন্ডার হইছে কোন পার্টিসিপেন্ট না থাকায়।


৬. লাস্ট রবীন্দ্র ভবনের ফার্নিচারের টেন্ডারে সময়ে সাদ্দাম-ইনান, শয়ন-সৈকত চারজনের সাথে বসে ফাইনাল হইলো কাজ আমাদেরকে দিতে হেল্প করবে। আমাদেরকে দিয়ে শিডিউল কিনাইয়ে টেন্ডার করায়ে ওরা পল্টি নিয়ে আরেকজনের পক্ষ নিয়ে নিছে। পরে ইনানের থেকে শুনলাম শয়নের এক কথা সাইফুর রহমান সোহাগ ও জাকির হোসেনের কোন লোককে কাজ করতে দিবে না। ওর বিরোধীতার কারণে নাকি আমাকে কাজটা দিতে পারে নাই। সেখানেও আমার প্রায় লাখ খানেক টাকা নষ্ট করাইলো। 


৭. আমার কাজের মান ভালো হওয়ায় স্টাফ ওয়েলফেয়ারে প্রতি বছর বলতে গেলে ট্রেজারার স্যার, রেজিস্ট্রার আমাকে ডেকে নিয়ে তিন লটের মধ্যে দুই লটে কাজ দিতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা, কর্মচারী সবায় খুব খুশি ছিল আমাদের কাজে। সেটাও বাগড়া বাঁধাইলো, নওগাঁর এক পার্টিকে দিয়ে টেন্ডার করাইয়ে ওদের আত্মীয় পরিচয় দেওয়ানো শুরু করলো। ঐ বার কাজের মান খারাপ হওয়ায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সাথে হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। পরে কয়েকবার মালামাল চেঞ্জ করে দিতে বাধ্য হইছে কিন্তু তাও একুরেট মাল দেয় নাই। 


ওদের এসব কীর্তিকর্ম দেখে একরকম বিরক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আর কোন টেন্ডার করিনি। শুধুমাত্র আমার সাথে না প্রতিটা সাবেক ছাত্রলীগের নেতার সাথে সেম কাজটাই করেছে। অনেকের সাথে ঘটে যাওয়া এর থেকেও প্যাথেটিক কাহিনী আছে সেগুলো জানি কিন্তু তাদের অনুমতি ছাড়া চাচ্ছি না লিখতে। শুধুমাত্র আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর মধ্যে ৩/৪ টা ঘটনা লিখলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে প্রশাসনের এমন কোন লোক নাই ওদের নামের উপরে দুইটা গালি দেয় না। নিয়োগ নিয়ে তৃতীয়/চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সাথে বেশ কয়েকবার ঝামেলায় জড়াইছে। 


৮. একবার জাকির ভাইয়ের অফিসে গেছিলাম একটা কাজে সে খুব আক্ষেপ করে বললো, আমার তো জানোস আইএসপির বিজনেস (ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি)। জহু হলে আমার কিছু কানেকশান চলতো সেটা বন্ধ করে দিছে শয়ন, ওদের কিছু টাকা দিতে চাইলাম সেটাও নিবে না। আমার কোম্পানিকে নাকি ক্যাম্পাস ও আশেপাশে ব্যবসাই করতে দিবে না। আমার ঘটনা শুনানোর পরে জাকির ভাই বললো পোলাপাইন মানুষ বুঝতেছেনা সাবেক হওয়ার পরে যখন কাজকর্ম করতে গিয়ে উস্টাগুতা খাইবে তখন বুঝবে।


নেতা হবার ৩/৪ মাসের মধ্যে প্রাইভেট কার, রয়্যাল এনফিল্ডের বাইক (তখন অবৈধ ছিল)। যেদিন টাকা দিতে গেছিলাম সেদিন সৈকত শয়নকে দেখাইয়ে বলতেছিলো ভাই দেখেন শয়ন ভাইয়ের টিশার্টের দাম ১৮ হাজার, শয়ন আবার বললো তোমারটাও তো ১৫ হাজার। এরপর আইফোন, দুইজনের প্রাইভেট কার, বাইক নিয়ে অনেক কথাই হইলো। আমার কাছে তখন মনে হচ্ছিলো ওরা একরকম ফ্যান্টাসিতে ভুগতেছিলো ড্রেস, ফোন, গাড়ি, বাইক, চশমা এসব কার কাছে কত দামি দামি জিনিসপত্র আছে এটা নিয়ে আলোচনা করতেছে!


শয়ন-সৈকতের সম্পর্কে সব থেকে বড় অভিযোগ ছিল কোন একটা হলে ওদের ভালো অবস্থান ছিল না। যে কারণে ওদের পিছনে ভাইটাল প্রোগ্রামেও ২০০/৩০০ বেশি লোক হত না। অথচ আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেহেদী মোল্লা ভাইয়ের সাথে রাজনীতি করেছে প্রতিটা হল থেকে ২০০/৩০০ পোলাইন আসতো। নেশাগ্রস্ত ও খামখেয়ালিপনায় চলার কারণে রাত ২/৩ টা বাজে গ্রুপে মেসেজ দিয়ে বলতো সবাইকে আসতে কারণ শয়ন ক্রিকেট খেলবে, ঘুম বাদ দিয়ে জুনিয়রদের বাধ্য করতো ওর সাথে ক্রিকেট খেলতে। সাংগঠনিক রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে জুলাই আন্দোলনে ওদের ভূমিকা ছিল খুবি নাজুক।


আমি সাদ্দাম-ইনানকে একাধিক দিন জিজ্ঞেস করছি তোমরা হল কমিটি কেন দিচ্ছে না। ওরা বলতো ভাই বিশ্ববিদ্যালয় ওরা একটু কো-অপারেটিভ হইলে দিয়ে দিতাম।


বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুইটা না চাওয়ার বড় কারণ ছিল হল কমিটি হয়ে গেলে এদের ধান্ধায় কিছুটা ছেদ পরবে। কথিত আছে ওরাই ক্যাম্পাসে এবং উদ্যানে প্রচুর দোকানপাট বসাইছিলো। নীলক্ষেতের পানির ব্যবসা করা, লেগুনা স্ট্যান্ট দখল, চানখারপুলে পানির ব্যবসা নিয়ে স্থানীদের সাথে মারামারির ভিডিও ফুটেজও ছিল প্রথম আলোর সাংবাদিকদের কাছে, আমাকে বলার পরে আমি ঐ সাংবাদিক ছোট ভাইকে রিকুয়েষ্ট করেছিলাম দরকার নাই নিউজ করিস না।


সব থেকে অবাক হইছি ঢাকা মেডিকেল থেকে নামসর্বস্ব কিছু প্রাইভেট মেডিকেলে রোগী পাচারের সাথে ওদের কিছু কর্মীদের নাম আসায়।


যারা ওদের রাজনীতি কাছে থেকে দেখেছে তাদের কাউকে যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন ওদের পিছনে কেমন কর্মী বাহিনী ছিল? আমি শতভাগ সিউর এই উত্তর দেওয়ার আগে একটা অথর্ব গালি দিয়ে দেন উত্তরটা দিবে। সারাদিন ক্যাম্পাসে কালো চশমা লাগাইয়ে ১০/১৫ টা বাইক নিয়ে শোডাউন দিয়ে বেড়াইতো, আর হর্ণ বাজাইতো, যেটা অতীতে কখনো দেখি নাই। মই কি হনুরে। এটাও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেগেটিভ ইম্প্রেশন ক্রিয়েট হইছে।


পার্টির ক্রিম খেয়ে বিতর্কিত করে চোরের মত নেপালে পালিয়ে আছে অথচ ফেসবুকেও দুইটা লাইনও লিখে না। তাপসের এখানে একটা কমেন্ট করেছিলাম সেটা দেখে আজকে এক বড় ভাই কল দিয়ে বললো নেপালে বসে শয়ন খুব আফসোস করে, পরে নাকি ওর আর রাজনীতিতে ব্যাক করা ঠিক হয় নাই। কত বড় *** চিন্তা করা যায়!


পুনশ্চঃ অনেকে এই স্ট্যাটাস পড়ে ভাবতে পারেন আমি কাজ পাইনি বলে ওদের বিরুদ্ধে বলতেছি বিষয়টা মোটেও সেরকম না। আমার আশেপাশে সবাই কমবেশ জানতো আমার বা অন্য সাবেকদের সাথে কি কি ঘটেছে৷ ওরা যদি সাংগঠনিক রাজনৈতিতে সফল হইতো তাহলে আমি জীবদ্দশয়ায় পাবলিক ফোরামে এইগুলো নিয়ে লিখালিখি করতাম না।’


No comments

Powered by Blogger.