চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টার উল্লেখযোগ্য বৈঠকের সারসংক্ষেপ
চারদিনের সফরে চীনের বেইজিংয়ে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ২০ মিনিটে তিনি বেইজিং পৌঁছান। এ সময় চীনের উপমন্ত্রী সান ওয়েডং বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান।
এর আগে বুধবার বিকালে চীনের হাইনান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। পরে বৃহস্পতিবার চীনের ইউনানে বোয়াও এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন।
সম্মেলনের ফাঁকে বেশ কয়েকটি সাইডলাইন বৈঠক করেছেন তিনি। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানানো হয়।
উল্লেখযোগ্য বৈঠকগুলোর মধ্যে রয়েছে—
চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েশিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক: এতে দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার ডিং জুয়েশিয়াং।
চীনের এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান চেন হুয়াইয়ু’র সঙ্গে বৈঠক: এতে চীনা কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের টেকসই সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো নির্মাণে চীনের এক্সিম ব্যাংক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কু ডংইউর সঙ্গে বৈঠক: বাংলাদেশ থেকে চীনে শাকসবজি ও ফল রপ্তানির বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন কু ডংইউ। তাঁর কাছে ফল প্রক্রিয়াকরণ, সবজি সংরক্ষণ ও প্যাকেজিংয়ের বিষয়ে সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক বলেছেন, ‘আমরা ম্যাচমেকার হিসেবে কাজ করব। বাংলাদেশ এবং চীনা খামার কোম্পানির মধ্যে নতুন নেটওয়ার্ক স্থাপন করে দেব।’
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরামের চেয়ারম্যান বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠক: বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নির্বিঘ্ন উত্তরণে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের সমর্থন ও পরামর্শ চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব। এসব কোরিয়া-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজ অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন তিনি।
রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি ওভারচুকের সঙ্গে বৈঠক: রাশিয়ার অর্থায়নে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা, রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের গম ও সার আমদানির পরিকল্পনা এবং বাংলাদেশে গ্যাজপ্রমের গ্যাস অনুসন্ধান কাজসহ পারষ্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উপ প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি ওভারচুক আলোচনায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে চায়। রাশিয়া চায়, আরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দেশটিতে পড়াশোনা করুক।
সাবেক ডেপুটি গর্ভনর উ শিয়াওলিং ওরফে মাদাম উ’র সঙ্গে বৈঠক: প্রফেসর ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি ও সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে তাঁর ভূমিকার কথা জানিয়ে মাদাম উ বলেন, ‘যদিও চীন ও বাংলাদেশ দারিদ্রের স্তরে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে তবু প্রফেসর ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের নীতি চীনা জনগণের জন্য ও পুরো এশিয়ার উন্নয়নের জন্য মূল্যবান অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত তরুণ শিক্ষাবিদ, সংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসি ও ম্যানেজমেন্ট স্কুলের ডিন প্রফেসর ঝু সুফেং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসকে সংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানান।
এর পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ‘বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক কনফারেন্স ২০২৫’ এ ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস। চার দিনের সফর শেষে আগামী ২৯ মার্চ দেশে ফিরবেন।
No comments