যুদ্ধের মাঝে ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নিরলস হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। বর্বর ও নির্বিচার এই হামলার মধ্যেও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ভূখণ্ডটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গত কয়েক মাসের মধ্যে গাজা থেকে ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে তারা।
একইসঙ্গে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক। এমন অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটে গেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
সোমবার (৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের সাথে দেখা করার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রোববার হাঙ্গেরি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটে গেছেন বলে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
ইসরায়েলি দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথের মতে, নেতানিয়াহু সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সাথে আলোচনা করবেন। এতে বলা হয়েছে, “গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের অবসানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উইটকফের উপস্থিতি ‘ইসরায়েলি বন্দি মুক্তির ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে’।”
সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সাথেও দেখা করবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড মূলত ট্রাম্পের শুল্ক নীতির তত্ত্বাবধান করেন। গত বুধবার উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতির কারণে অন্যান্য দেশের সাথে ইসরায়েলের ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বসতে চলেছেন নেতানিয়াহু।
পৃথক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, রোববার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। আগামী দুই দিন ধরে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে তাড়াহুড়ো করে নির্ধারিত বৈঠক করবেন।
বৈঠকগুলোতে মূলত গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ এবং জিম্মিদের বিষয়ে আলোচনা করা হবে, যাদের মধ্যে ৫৯ জন এখনও গাজায় বন্দি রয়েছেন। সেইসাথে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে। সফরের কথা ঘোষণা করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে নেতানিয়াহু রোববার বুদাপেস্ট থেকে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এদিকে নেতানিয়াহুর এই সফর মঙ্গলবার পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার কথা থাকলেও ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, এই সফরের সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে। গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু, ট্রাম্প এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় কথোপকথনের পর এই সফরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, স্ত্রী সারাকে নিয়ে ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর পরেইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিমানবন্দর থেকে কাফেলা নিয়ে ব্লেয়ার হাউসের দিকে যান। সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সাথে তার দেখা করার কথা ছিল।
আনাতোলু বলছে, ইসরায়েলের প্রধান মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রে নেতানিয়াহুর সফর এমন এক সময় এলো যখন তেল আবিব গাজা উপত্যকায় মারাত্মক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৩ সালের অক্টোবর থেকে নির্বিচার হামলায় অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন।
গত সপ্তাহান্তে নেতানিয়াহু গাজায় আক্রমণ আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেন। ফিলিস্তিনি এই ছিটমহল থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের বিষয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাও চলছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।
No comments