ফেসবুকে সংবাদ শেয়ার করায় শিক্ষিকাকে শোকজ করলেন দুই কর্মকর্তা
মাদারীপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানের সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করায় লক্ষ্মী বিশ্বাস নামের এক শিক্ষিকাকে শোকজের চিঠি দিয়েছেন দুই শিক্ষা কর্মকর্তা। ওই শিক্ষিকাকে এক কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে বিভাগীয় মামলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
লক্ষ্মী বিশ্বাস জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের ৪২নং খালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে একই লেখা দুইটি শোকজ চিঠিতে স্বাক্ষর করেন জেলার রাজৈর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলসান আরা ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম মিয়া। পরে সহকারী শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাসকে রাজৈর অফিসে ডেকে তার হাতে চিঠিটা ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে দুই শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই শোকজের চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তারা।
দুই শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দুদুকের অভিযান। এই সংবাদটি একটি বেসরকারি চ্যানেলে সরাসরি প্রচার হয়। এই সংবাদের লিংক শেয়ার করেন সহকারী শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাস। সরকারি কর্মচারী হিসেবে এই সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) শেয়ার করা সরকারি কর্মচারী আচরণ আইন লঙ্ঘনের শামিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী শিক্ষিকাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। পাশাপাশি এক কর্মদিবসের মধ্যে চিঠির উত্তরও দিতে বলা হয়। উল্লেখ করা হয় ভাইরাল করতেই ওই সংবাদটি শেয়ার করা হয়েছে। ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।
সহকারী শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাস জানান, এক শিক্ষা কর্মকর্তা তার ইনবক্সে সংবাদটি দিতে বলেন। তাকে পাঠাতে গিয়ে ভুলবশত সংবাদের লিংকটি ফেসবুকে শেয়ার হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিক শেয়ার হওয়া লিংক কেটে ফেলি। কিন্তু বিষয়টি এতদূর চলে যাবে তা বুঝতে পারিনি।
এ নিয়ে রাজৈর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই একদিনে আলাদা দুটি চিঠি করা হয়। ফেসবুকে শেয়ার করে ভাইরাল করার উদ্দেশ্যেই শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাস এমনটা করেছেন। তার প্রাপ্ত জবাব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
রাজৈর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলসান আরা বলেন, শিক্ষিকা লক্ষ্মী বিশ্বাস ফেসবুকে শেয়ার করে সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশেই কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নজরে আসলে লক্ষ্মী বিশ্বাসকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। ওই শিক্ষিকার সঙ্গে অন্যায় কোন কাজ করা হবে না।
দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান জানান, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেই এই শোকজ চিঠি করেছেন। একই সঙ্গে দুই কর্মকর্তা একই ফরমেটে চিঠিতে স্বাক্ষর করবেন, এটা দুঃখজনক। এটা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে করা হয়েছে।
দুদক ও শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ওই শিক্ষকদের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়। পদায়নের জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনজুর রহমানের বিরুদ্ধে। একই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত উপ-আনুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও শিক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের অর্থের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগও ওঠে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে মাদারীপুর দুদকের ৭ সদস্যের একটি টিম জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে অভিযান চালায়। এ সময় প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। একপর্যায়ে প্রশ্ন করলে রেগে যান অভিযুক্ত জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনজুর রহমান এবং দুদকের সঙ্গে জড়ান বাকবিতণ্ডায়। তদন্ত শেষে প্রধান কার্যালয়ে রিপোর্ট প্রদান করে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান জেলা দুদক কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান।
No comments