Adsterra

চিকেনস নেকের নিরাপত্তা জোরদারে ভারী যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন নয়াদিল্লির

চিকেনস নেকের নিরাপত্তা জোরদারে ভারী যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন নয়াদিল্লির, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla new

ভারতের বহুল আলোচিত ‘চিকেনস নেক’ খ্যাত শিলিগুঁড়ি করিডোরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। করিডোরে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও।

শুক্রবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ এ করিডোরের নিরাপত্তায় ব্যাপক সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নয়াদিল্লি।

ইন্ডিয়া টুডে বলেছে, শিলিগুঁড়ি করিডোরকে নিজেদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন হিসাবে মনে করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই পথ ব্যবহার করে সামরিক প্রস্তুতির মাধ্যমে যে কোনও ধরনের সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।

করিডোরের পার্শ্ববর্তী সুকনায় রয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর ত্রিশক্তি কর্পসের সদরদপ্তর। অঞ্চলটির নিরাপত্তায় মূখ্য ভূমিকা পালন করে এই বাহিনী। রাফায়েল যুদ্ধবিমান, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত প্রযুক্তির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এই ত্রিশক্তি কর্পস।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য করিডোরের সুরক্ষার বিষয়ে ভারতের অবস্থানকে আরও জোরদার করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার আগে চিকেনস নেককে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে; যেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনী যে কোনও ধরনের সম্ভাব্য হুমকির ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রসর হতে পারবে।

ইন্ডিয়া টুডের তথ্য বলছে, শিলিগুঁড়ি করিডোরে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। মিগ বিমানের পাশাপাশি হাশিমারা বিমানঘাঁটিতে রাফাল যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রন মোতায়েন করেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। এ ছাড়া, সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় শিলিগুড়ি করিডোরে ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের একটি রেজিমেন্ট মোতায়েন করা হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। 

সেইসঙ্গে আকাশপথ ব্যবহার করে যে কোনও ধরনের হামলা ঠেকাতে মোতায়েন করা হয়েছে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। যে কোনও ধরনের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আকাশসীমার সুরক্ষা নিশ্চিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে এমআরএসএএম ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন রেখেছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী।

এ ছাড়াও, নিয়মিত টি-৯০ ট্যাংকসহ তাজা গুলি বর্ষণের মহড়া পরিচালনা করছে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ত্রিশক্তি কর্পস। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিযানের প্রস্তুতি জোরদারের লক্ষ্যে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ইন্ডিয়া টুডে বলছে, আঞ্চলিক হুমকির বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ভারত। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) মাধ্যমে বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করছে নয়াদিল্লি।

বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ভারতের জন্য কৌশলগত, বিশেষ করে শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তার বিষয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

মূলত, কয়েক দিন আগে চীন সফরে গিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশে চীনের সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়ে কথা বলেন তিনি। 

ড. ইউনূস বলেন, ভারতের সেভেন সিস্টার্স ল্যান্ডলকড বা স্থলবেষ্টিত একটি অঞ্চল এবং ওই অঞ্চলে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ, চীন যেটাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক কর্যক্রম প্রসারের কথা ভাবতে পারে।

তার ওই মন্তব্যের পরপরই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ভারতে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ‘চিকেনস নেক’-এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। 

এ ছাড়া, ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহানও সম্প্রতি সামরিক বাহিনী অপারেশনাল প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে উত্তরবঙ্গ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় ভারতের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন। সফরে সম্মুখ সারির ঘাঁটিগুলো পরিদর্শন ও নিরাপত্তা কৌশল সম্পর্কে সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনাও করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ভুটানের ভূখণ্ডের ডোকলামে চীনা সামরিক বাহিনীর একটি সড়ক নির্মাণ কাজে ভারতীয় বাহিনীর বাধা দেওয়ার ঘটনায় ব্যাপক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। সেই সময় চিকেনস নেকের নিরাপত্তার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। কারণ ডোকলামের ওই সড়ক ধরে শিলিগুঁড়ি করিডোরে পৌঁছানোর পথ অনেক সহজ হয়ে যেতো।

কিন্তু ভারতীয় সামরিক বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ থেকে পিছু হটে চীনের সেনাবাহিনী। অতীতের এসব ঘটনা থেকে ভারত নিজেদের প্রতিরক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রস্তুতি বাড়িয়ে চলেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে।


No comments

Powered by Blogger.